বৈষম্যহীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলনে অংশ নেন লাখো ছাত্র-জনতা। দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, জাতির জন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের এরই মধ্যে ‘জুলাই শহীদ যোদ্ধা’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’র স্বীকৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জানা গেছে, জুলাই যোদ্ধাদের জন্য তিনটি প্রকল্প নেওয়া হলেও বিভিন্ন বিতর্কের কারণে তার দুটি বাতিল করা হয়েছে। জুলাই শহীদদের স্মরণে জেলায় জেলায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব জায়গায় আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন সেসব জায়গায় ছোট আকারে স্তম্ভ নির্মাণ করা এবং শহীদদের কবর বাঁধাই করা হবে।
নিহত ও আহত যোদ্ধারা পাবেন যেসব সুবিধা: তিন ক্যাটাগরির মধ্যে ক্যাটাগরি-এ-তে (অতিগুরুতর আহত) জুলাই যোদ্ধা। যারা চিকিৎসার পরও শারীরিক অসামর্থ্যতার নিরিখে অন্যের সহায়তা ব্যতীত জীবনযাপনে অক্ষম। এই শ্রেণির যোদ্ধারা এককালীন ৫ লাখ টাকা (যার মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা) এবং মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাও পাবেন তারা। তা ছাড়া উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাবেন। পাবেন কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা। পরিচয়পত্রপ্রাপ্ত হবেন এবং পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের গেজেট অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত ক্যাটাগরি-বি-তে থাকা জুলাই যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ টাকা (২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা) এবং মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। পাবেন কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি-আধাসরকারি কর্মসংস্থানের সুযোগ। পরিচয়পত্রপ্রাপ্ত হবেন এবং পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন। আহত ক্যাটাগরি-সি-তে থাকা জুলাই যোদ্ধা যারা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ পাবেন এককালীন ১ লাখ টাকা ও মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা। এ ছাড়া পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্রপ্রাপ্ত হবেন এবং পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধাদি পাবেন। এর বাইরে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক উপার্জনমুখী কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। শহীদ পরিবার ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের ভাতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে অনলাইনে।
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন সারা বিশ্বে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যম প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসা সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন করবে। সেইসঙ্গে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে প্রত্যেক শহীদের নামে স্মৃতিফলক স্থাপন, জাতীয় পর্যায়ে স্মরণ কর্মসূচি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ডিজিটাল আর্কাইভ রাখার কাজ করছে। এই ফাউন্ডেশনে থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এ-শ্রেণির আহতদের প্রথম ধাপে এক লাখ এবং দ্বিতীয় ধাপে তিন লাখসহ মোট ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বি-শ্রেণি থাকাদের দেওয়া হয় প্রথম ধাপে এক লাখ এবং দ্বিতীয় ধাপে দুই লাখসহ মোট তিন লাখ টাকা। আর সি-শ্রেণির আহতদের এক লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনে যারা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে তার প্রমাণ বা কাগজপত্র দিতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকে সে অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কালবেলাকে বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের পরিবারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। জুলাই যোদ্ধাদের জন্য স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া শহীদদের কবর বাঁধাই এবং যেসব জায়গায় শহীদ হয়েছে সেসব জায়গায় ছোট স্তম্ভ তৈরি করা হবে। শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়াও মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এককালীন টাকা দেওয়া হয়েছে। এবং তাদের পরিবারের জন্য চাকরি ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
মন্তব্য করুন