উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় ভারী বৃষ্টির মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও কেবল ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষসহ গবাদি পশু। ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আট শতাধিক, লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে শতাধিক, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে পাঁচ শতাধিক, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে তিন শতাধিক পাকা-আধাপাকা ও টিনের ঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। গতকাল রোববার এসব ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
রংপুর: রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পাঁচ ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম। রোববার সকাল ৮টার দিকে কয়েক মিনিটের ঝড়ে আলমবিদিতর এবং নোহালী ইউনিয়নে আট শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে আগাম আমন ধানের ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছপালা উপড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ৮টার পর হঠাৎ দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। মুহূর্তেই তাণ্ডব চালিয়ে যায় ঝড়। বৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের আকস্মিক তাণ্ডবে টিনশেড ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে ও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়। উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের কুতুব, খামার মোহনা ও চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামসহ নোহালীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরও তিন ইউনিয়নের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড় কিছুক্ষণ স্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হতো বলে জানান তারা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে আলমবিদিতর, নোহালী, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের প্রায় ১২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজিবুল করীম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা কালবেলাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ ইউনিয়নের আনুমানিক ১২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে দুইশ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আরও শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।
লালমনিরহাট: হঠাৎ ঝড়ে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে টিনের ঘর, ভেঙে পড়েছে গাছপালা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিন ও গাছের ডালের আঘাতে তিনজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন ওই ইউনিয়নের বাদশা মিয়া (৪০), মামুদ মিয়া (৭০) ও শহিদুল ইসলাম (৪৬)। আহতদের কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে আকস্মিক ওই ঝড় বয়ে যায়।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. জাকিয়া খাতুন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। ঘটনাস্থলে তদন্ত টিম পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে দ্রুত সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): ভারী বৃষ্টির ফাঁকে ঘূর্ণিঝড়ে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর খাড়া গ্রাম বানিয়াপাড়া থেকে শুরু করে ডিসির মোড় পর্যন্ত কয়েকশ বাড়িঘর ভেঙে গেছে। ৬০ জন মানুষ আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন এবং দুজন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
রোববার সকাল ৮টার দিকে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়, এ সময় গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের আনুমানিক ১০ কিলোমিটার এলাকার ওপর দিয়ে এ ঘূর্ণিঝড় পাঁচ শতাধিক পাকা-আধাপাকা ঘরবাড়িসহ গাছপালা ও বৈদ্যুতিক লাইনের পিলার উপড়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা জানান, ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে এসেছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবারের প্যাকেট, মেডিকেল টিম বসানোর পাশাপাশি রাতের খাবারের জন্য রান্না শুরু করেছি। পরবর্তী সময়ে তাদের পুনর্বাসনে টিন, কাঠ ও ঘর দিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও): ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে মাত্র ১৩ সেকেন্ডের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে পাঁচটি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন শতাধিক পরিবার। আহত হয়েছে কয়েকজন মানুষসহ গরু-ছাগল। রোববার ভোরের দিকে উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের পিয়াজুপাড়া, সুতাহারপাড়া, রায়মহল ও ভিতারবাড়ী এবং বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বাদামাবাড়ী এলাকায় এ ঝড় আঘাত হানে। মুহূর্তে ঝোড়ো বাতাসে ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়। গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের কেবল ছিঁড়ে যায়।
পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল বলেন, আমাদের ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রামে প্রতিটি বাড়িরই কোনো না কোনো ক্ষতি হয়েছে। আল্লাহর রহমতে প্রাণহানি ঘটেনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
মন্তব্য করুন