ট্রেনযাত্রা মানেই এক বিশেষ আনন্দ; দীর্ঘ পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় দুলে দুলে চলা এই যানের তাল। ভাড়ায় সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও স্মৃতিময় এই যাত্রার সঙ্গী ট্রেনের দিকে তাকালে এক অদ্ভুত বিষয় চোখে পড়ে— প্রায় সব ট্রেনের ছাদই সোজা নয়, বরং গোলাকৃতি বা বাঁকা। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, ট্রেনের ছাদ এমনভাবে তৈরি করা হয় কেন? কেবল নকশার সৌন্দর্যের জন্য, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ? চলুন জেনে নিই এই নকশার পেছনে লুকিয়ে থাকা প্রকৌশল ও বাস্তবিক কারণগুলো।
১. বৃষ্টি ও বরফের পানি নিষ্কাশনের সুবিধা
ভাবুন তো, যদি ট্রেনের ছাদ একদম সমান হতো, তবে প্রবল বর্ষণ বা তুষারপাতের সময় ছাদের উপর পানি জমে ছোট্ট এক ‘সুইমিং পুল’-এর মতো অবস্থা তৈরি হতো! এতে ট্রেনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারত, এমনকি মরিচা পড়ার আশঙ্কাও বাড়ত। তাই ছাদে এই সামান্য বাঁক দেওয়া হয়, যাতে পানি বা বরফ সহজে গড়িয়ে পড়ে এবং ট্রেনের গায়ে জমতে না পারে।
২. বাতাসের প্রতিরোধ কমাতে সহায়ক
চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বের করলে যেমন বাতাসের চাপ অনুভব করা যায়, ঠিক তেমনি দ্রুতগামী ট্রেনের ওপরও প্রচণ্ড বায়ুপ্রবাহ কাজ করে। বাঁকা ছাদ ট্রেনের ওপর বাতাসের ধাক্কা কমিয়ে দেয়, ফলে চলাচল হয় মসৃণ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী।
৩. গঠনগতভাবে আরও শক্তিশালী করে
স্থাপত্য ও প্রকৌশলবিদদের মতে, বাঁকা বা গম্বুজাকৃতি কাঠামো সমান (ফ্ল্যাট) কাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি দৃঢ়। এই আকৃতি বাতাসের চাপ সমানভাবে ভাগ করে নেয়, ফলে ট্রেন তীব্র বাতাস বা বিদ্যুতের খুঁটির কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত কম্পন বা চাপের শিকার হয় না।
৪. ভেতরে বাড়তি জায়গার অনুভূতি দেয়
বাঁকা বা গম্বুজাকৃতি ছাদ ট্রেনের ভেতরের জায়গাটিকে দেখতেও প্রশস্ত এবং আরামদায়ক করে তোলে। এতে ট্রেনের প্রস্থ না বাড়িয়েও যাত্রীদের জন্য মাথার ওপরে বাড়তি জায়গা পাওয়া যায়, যা দীর্ঘ ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ায়।
৫. তাপমাত্রা ভারসাম্য রাখতেও ভূমিকা রাখে
প্রকৌশলীদের মতে, বাঁকা ছাদের এই নকশা ট্রেনের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। গরমের সময় তাপ ছড়িয়ে যেতে এবং ঠান্ডা রাতে তাপ ধরে রাখতে এ ধরনের ছাদ কার্যকর ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, ট্রেনের ছাদ শুধু সৌন্দর্যের জন্য বাঁকা নয়, এর প্রতিটি বাঁকেই রয়েছে প্রকৌশল, কার্যকারিতা ও যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের নিখুঁত সমন্বয়।
সূত্র : জিও নিউজ উর্দু
মন্তব্য করুন