খুলনার দাকোপে মধ্যরাতে তীব্র জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে অন্তত ৫টি গ্রামের তিনশ পরিবার। এখন পর্যন্ত তিন হাজার বিঘা জমির ধান শত শত মাছের ঘের প্লাবিত হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। বাঁধ সংস্কারে পাউবোর অবহেলাকে দায়ী করে গোটা ইউনিয়ন ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) মধ্যরাতে ঢাকী নদীর জোয়ারের পানির চাপে দাকোপের ৩১নং পোল্ডারের অধীন তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া হরিসভা মন্দির এলাকার আনুমানিক ২শ ফুট ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ঘটনায় তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী ও আড়াখালী গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, পুকুর ও ৩ হাজার বিঘা জমির আমন ফসলের খেত।
এদিকে বুধবারের মধ্যে বাঁধ আটকাতে না পারলে দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলা বুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাঁকড়া বুনিয়াসহ প্রায় গোটা তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন গাজী। তিনি বলেন, ‘ভোরবেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও বেশি তৎপর হয়ে ২টা বালির টিউব দিয়ে চাপান দিলে বাঁধটি আটকানো সম্ভব হতো। কিন্তু তারা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
বুধবার বিকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাটিতে বাঁধ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুপুরে এই এলাকা পরিদর্শন করেন দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমত হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম এবং স্থানীয় সেনা ক্যাম্প কমান্ডার ভাঙন এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সঞ্জয় সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘মধ্যরাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন বালুর বাধের বস্তায় ফাটল ধরে এই এলাকা প্লাবিত হয়। প্রতি বছর এই এলাকায় ভাঙন হয়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়। ভাঙনের ক্ষত কাটিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগে আবারও ভাঙনের মুখে পড়তে হয় এই বটবুনিয়ার ৩ কিলোমিটার বেড়িবাধ সংলগ্ন এলাকার মানুষ। শুধু আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির মধ্যে বেঁচে থাকার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের মানুষের।’
নির্বাহী অফিসার আসমত হোসেন বলেন, ‘আশা করছি রাতের মধ্যে বাঁধ আটকাতে পারব। বালির টিউবসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখা আছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সব উদ্যোগ নিয়েছেন এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার চিড়া, গুড় এবং রান্নার জন্য চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। বিকাল নাগাদ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য পরিবারগুলোকে অনুরূপ সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেড়িবাঁধের ওই অংশটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন ক্ষতি হলো।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘ভেঙে যাওয়া অংশে আগে থেকেই জিও টিউব দেওয়া ছিল। তবে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের প্রচণ্ড চাপে ২৫ মিটারের মতো জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। নতুন করে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আশাকরি দ্রুত বাঁধটি মেরামত হয়ে যাবে।’
মন্তব্য করুন