বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো একটি রাজনৈতিক দল নয়, সব রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে, তাদের সবার অবদানের পরিপ্রেক্ষিতেই সংঘটিত হয়েছে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান-২০২৪। মাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে যদি আমরা মনে করি যে, একটা ফ্যাসিস্ট সরকার বা ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে, সেটা সঠিক নয়।’
গণঅভ্যুত্থানকে ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর যে কোনো অপচেষ্টা আমার মনে হয় সফল হবে না।’
গত শুক্রবার জুলাই সনদ সইয়ের দিনে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন জুলাই যোদ্ধারা। তাদের নিয়ে বক্তব্যের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিষয়টি স্পষ্ট করতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্যের কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল—তারা কি মনে করেন, জুলাই স্পিরিট (চেতনা) বা জুলাই নিয়ে বিএনপির যে অবস্থান, সেটাকে এক ধরনের বিপরীতমুখী দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে? কিংবা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীত অবস্থানে আছে বিএনপি—সেটা কি বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে?
জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিএনপির ৪২২ জন নিহত হয়েছেন। তারা ছবিসহ তাদের নেতাকর্মীদের তালিকা প্রকাশ করেছেন। এ সংখ্যা আরও বেশি হবে, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির যে ভূমিকা, যে সংগ্রাম, যে ত্যাগ—সেই রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এখানে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরাম সংগ্রাম-আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে রক্তের সোপান তৈরি হয়েছে। শাপলা চত্বরের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেটা মনে রাখতে হবে। যে কোনো একটি রাজনৈতিক দল নয়, সব রাজনৈতিক দল, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে, তাদের সবার অবদানে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন বলেন, শনিবার একটি রাজনৈতিক দলের সংবাদ সম্মেলনে তার একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। তাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তিনি এটাকে স্বাগত জানান। এভাবেই রাজনৈতিক চর্চা হওয়া উচিত। গণতান্ত্রিক চর্চা হওয়া উচিত। যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই তারা কথাগুলো বলেছে। তিনি মনে করছেন, বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদের ঐতিহাসিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার দিকে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মাঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠন তাদের সঙ্গেও কথা বলেছিল। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গেও কথা বলেছে। তাদের একটা যৌক্তিক দাবি ছিল। সেই যৌক্তিক দাবি পূরণের জন্য তিনি নিজেও স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, কথা বলেছিলেন। সেটা ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সঠিকভাবে অ্যাড্রেস করেছেন, সেটা প্রেসে বলেছেন, সংশোধন করেছেন। এরপরে তাদের অসন্তোষ থাকার কথা নয়। যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে, তারা খোঁজ নিয়েছেন। এটা তদন্তাধীন আছে। দেখা গেছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের নামে কিছুসংখ্যক ছাত্র নামধারী, সেটা ইন্টারভিউতে তিনি দেখেছেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ফ্যাসিস্ট সরকারের ফ্যাসিস্ট বাহিনী বলে তিনি মনে করেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বাহিনী যে এখনো সব জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, সেটা সেদিন দৃশ্যমান হয়েছে। এখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা ছিল তার সুস্পষ্ট বক্তব্য।
তিনি বলেন, এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংগঠন ও শক্তিকে সম্মানিত করার চেষ্টা করেছেন। যাতে কোনোক্রমে কেউ যেন জুলাই যোদ্ধাদের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করতে না পারে, তাদের সম্মানহানি না হয়। কারণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনের জন্য শক্তি। সামনে এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য তারা সমুন্নত রাখতে চান। জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, জাতি বিনির্মাণ করতে চান। সেজন্য তারা সব সময় তাদের সম্মানের চোখে দেখেছেন, দেখবেন, দেখতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তার বক্তব্য হলো—জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনের একটি লিডিং ফোর্স, ড্রাইভিং ফোর্স। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে কোনো রকমের কোনো কলঙ্ক দাগ স্থাপন হোক, তা তারা কখনোই চাইতে পারেন না। যে কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় সবাই যেন এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করেন। তারা সবাইকে সেই আহ্বান জানান। এ সময় তার বক্তব্য কাটিং করে বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা দেওয়া থেকে সব মহলকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানান।
বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে বলে মনে করেন কি না—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আমি মনে করি না বিকৃত করা হয়েছে। তবে আংশিক বক্তব্যটা কাট করে তারা কথা বলেছে বলে আমার মনে হয়। কারণ, আমি আমার বক্তব্যের শেষ লাইনে বলেছি যে, ওখানে কোনো জুলাই যোদ্ধা, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা ব্যক্তি ওই বিশৃঙ্খল ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।
সাম্প্রতিক সময়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, বিষয়গুলো তদন্তাধীন আছে। সরকারও সম্ভবত একটা তদন্ত দল করেছে। তাদের ফাইন্ডিংস কী আসে, দেখা যাক। তবে মনে হয়, কিছু ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য হয়তোবা এগুলো করা হয়ে থাকতে পারে। কোনো কোনো গোষ্ঠী, হয়তো পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা, পতিত ফ্যাসিবাদ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তবে সেটা তদন্ত করার আগে বলা যাবে না।
মন্তব্য করুন