ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ফলে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি, প্রযুক্তি শিল্প ও শিক্ষা খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে গ্রাহক হারানোর শঙ্কাও রয়েছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইন্টারনেট সেবার ওপর শুল্ক আরোপের কারণে দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও সরকারি বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা গ্রহণেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। এর ভুক্তভোগী হবেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও। এমনিতেই মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধির ফলে গত বছরের শেষার্ধে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে ১ কোটির মতো। এখন এই সেবায় শুল্ক আরোপে গ্রাহক পর্যায়ে দাম আরও বাড়বে। এতে গ্রাহকসংখ্যা আরও কমে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মাইনুল হোসাইন কালবেলাকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এমনিতেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম। আমাদের ইন্টারনেট স্পিড এবং অন্যান্য জিনিসের অবস্থাও ভালো নয়। আরেকদিকে সরকার বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা নিয়ে আসছে, যেগুলো ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন। এখন যদি মানুষ ইন্টারনেট কিনতে না পারে, অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে, সেখানে সরকারের এসব ডিজিটাল উদ্যোগের কোনো লাভ পাওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের কাছে এমনিতেই বাজেটস্বল্পতা থাকে, ইন্টারনেটে দাম বাড়ানোর ফলে বিভিন্ন ডিজিটাল কোর্স ও অনলাইন লার্নিং সাইটগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব পড়বে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের ওপর যে ট্যাক্স ধার্য করা হয়, তা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। যেখানে আমরা আশা করছিলাম নতুন সরকারের সময়ে ইন্টারনেটের দাম কমবে, সেখানে আরও বাড়ানো হলো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর ফলে ফ্রিল্যান্সার ও ফেসবুক কমার্সের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে, যারা মূলত ব্রডব্যান্ডের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। সামনের দিনগুলোতে এ কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারীর সংখ্যা কমে যাবে, যার ফলে ডিজিটাল অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বেসিসের চেয়ারম্যান রাফেল কবির বলেন, ইন্টারনেট এখন বিলাসিতা নয় বরং মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকারের খরচ হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়া হলে সামগ্রিক জীবনযাত্রায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এটি সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করব, সরকার ইন্টারনেটের ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে দাম আরও কমানোর পদক্ষেপ নেবে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ইন্টানেট একটি মৌলিক অধিকার। এর ওপর শুল্ক আরোপের ফলে জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে এবং মৌলিক অধিকারের ব্যত্যয় ঘটবে। স্বল্প আয়ের মানুষও ডিজিটালাইজেশনের দিকে ঝুঁকছে। শুল্ক আরোপের ফলে তারাও ইন্টারনেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
এরই মধ্যে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট সেবার ওপর বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেও এটি বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক নীতি পরামর্শক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব কালবেলাকে বলেন, সম্পূরক শুল্কের এই প্রস্তাবনা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে রিভিউ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। আমরা মনে করি, ইন্টারনেট এবং আইএসপি যেহেতু তরুণ প্রজন্মের প্রোডাক্ট, তাই এটিকে যথাসম্ভব শুল্ক সুবিধা রাখা বা কম শুল্কে রাখা উচিত। যেহেতু আইএসপি গ্রোয়িং ইন্ডাস্ট্রি তাই এই ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে যতটা সম্ভব বাড়তি করের বোঝা থেকে মুক্ত রাখা গেলে আমরা দেশের টেক ইন্ডাস্ট্রিকে প্রমোট করতে পারব।