সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
মিজানুর রহমান, ফেনী
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বন্যায় কেন প্রতি বছর ডুবছে ফেনী

বাঁধের দাবিতে রাস্তায় স্থানীয়রা
বন্যায় কেন প্রতি বছর ডুবছে ফেনী

ফেনী মূলত প্রতি বছর আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে এবং পানি থাকে অল্প কিছুদিনের জন্য। এই অল্প দিনেই ব্যাপক ক্ষতি ও দুর্ভোগ বয়ে আনে ফেনীবাসীর জীবনে। ফেনীতে বন্যার প্রধান কারণ পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত। ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখানকার বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ঢল দ্রুত ফেনী জেলায় এসে পৌঁছায়, যার ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট এবং নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় বন্যার প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন জেলাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থায়ী বাঁধ না থাকায় গত বছরের মতো এবারও বন্যার পানিতে ডুবতে হয়েছে ফেনীর বাসিন্দাদের। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গতবার নির্মাণ হওয়া বেড়িবাঁধ এবার পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। এতে ৪১টি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন জনপদ। এসব ভাঙা স্থান দ্রুত ও টেকসইভাবে নির্মাণের দাবি জানান তারা। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার জেলার পরশুরাম উপজেলায় মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এবার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামে ও ফুলগাজীতে মোট ৪১টি স্থান ভেঙে জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের বন্যায়ও মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থানে ভেঙেছিল। পরে ২০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও বছর না পেরোতে আবারও ভেঙেছে। পাউবোর যথাযথ তদারকি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধ ভেঙে প্রতি বছর এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন তারা। এজন্য তারা এবার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

ফুলগাজীর নিলক্ষ্মী গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, আমরা এখনো গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এর মধ্যে আবার বাঁধ ভেঙে আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। আমরা চাই বাঁধগুলো শক্তভাবে নির্মাণ করা হোক। বিগত সময় যারা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

ফুলগাজী উপজেলার নতুন মুন্সিরহাটের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউছুফ সোহরার বলেন, ‘ঘরে ফিরেও আমরা ভালো নেই। পানি উঠে সবকিছুই নষ্ট করেছে। কবে নাগাদ স্বাভাবিক জীবনে ফিরব জানা নেই। আমরা আর এসব পরিস্থিতি দেখতে চাই না। অবিলম্বে আমাদের বাঁধ নির্মাণ করে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

পরশুরাম উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজুল হক হাসান বলেন, আমরা এভাবে প্রতি বছর সম্পদ হারাতে পারব না। দয়া করে সব অনিয়ম বন্ধ করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ভেঙে পড়া বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণ করে এলাকার মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন। আমরা আর বানের জলে ডুবতে চাই না।

জানতে চাইলে ফেনী ইউনিভার্সিটির পুরকৌশল বিভাগের ডিন সোহরাব হোসাইন কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছর বন্যার পর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেড়িবাঁধ মেরামত করা গেলে আবার ভাঙত না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো উচিত। এ ছাড়া মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীসহ ফেনীর নদীগুলোয় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য নদী খনন করে এর গভীরতা বাড়াতে হবে। পানি যাওয়ার জায়গা সংকুচিত করা যাবে না। পানি রোখার মতো টেকসই বাঁধ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।’

পাউবো ফেনীর প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে থাকি। ভেঙে পড়া বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করা হবে।’

৫৫ সংগঠনের মানববন্ধন: টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গতকাল সকালে ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদ, পরশুরাম সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্রসমাজসহ ৫৫টি সংগঠনের আয়োজনে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন ফেনী বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক ও সিজিডির নির্বাহী পরিচালক সাইদুল ইসলাম।

তাদের পাঁচ দফা দাবি হলো—স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত একনেকে পাস করে বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে; ফেনী জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অপসারণ ও শাস্তি দিতে হবে; প্রতি মাসে ফেনী পাউবো মাঠে গণশুনানির মাধ্যমে জনগণকে বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণ হালনাগাদ জানাতে হবে; এবারের বন্যার জন্য দায়ী বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে; বল্লা মুখা বাঁধ নির্মাণ ও মুছাপুর ক্লোজার পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি সব বাঁধ সংরক্ষণ এবং খাল খননের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে : মিডিয়া সেল 

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন হবে : এসএম জাহাঙ্গীর

অ্যানফিল্ডে এক দশকের অভিশাপ ভাঙল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

রূপনগরে আগুন / ডিএনএ শনাক্তের পর ১৬ মরদেহ পেলেন স্বজনেরা

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক 

সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : বাসস চেয়ারম্যান

রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতকে হারিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

‘আগুন লাগার ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে’

কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ

১০

গাজায় আবারও ইসরায়েলের বিমান হামলা 

১১

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১২

আ.লীগের কেন্দ্রীয় ১ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

হোটেলে নাশতা খেয়ে শিশুসহ ৬ জন অজ্ঞান

১৪

তাঁতিবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ

১৫

তিন ধর্মের উপাসনাস্থল নির্মিত হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

১৬

সীমান্তে ১২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

১৭

রাজধানীতে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৮

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব দুঃশাসনের কবর দেওয়া হবে : জুয়েল

১৯

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ : সারজিস

২০
X