থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির ডানপন্থি ধনকুবের অনুতিন চার্নভিরাকুল। গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।
চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লির ৪৯২ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ৩১১ জনের ভোট পেয়েছেন ভুমজয়থাই পার্টির এ নেতা। এটি প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে বেশি। অনুতিনের এ জয় ফেউ থাই পার্টির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে, যে দলটি একসময় প্রভাবশালী ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রার নেতৃত্বে অদম্য ছিল।
দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অনুতিন অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রতিদিন, কোনো ছুটি ছাড়াই কঠোর পরিশ্রম করব, কারণ হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমাদের দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।’
অনুতিন চার্নভিরাকুল পারিবারিকভাবে নির্মাণ খাতের ব্যবসায় যুক্ত। তিনিই বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার প্রতিষ্ঠান ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর ও পার্লামেন্ট ভবনসহ অনেক বড় প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৫৮ বছর বয়সী এ নেতা এর আগে উপপ্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। থাইল্যান্ডে কভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একজন কট্টর রাজতন্ত্রবাদী হিসেবে অনুতিনকে একজন রক্ষণশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে তিনি গাঁজা বৈধ করার জন্য একটি সফল প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। তাই সেই প্রচারাভিযানের ফলে দেশটিতে গাঁজা বিক্রি অনেক বেড়ে যায়।
পার্লামেন্টে অনুতিনের এ বিজয় এসেছে প্রগতিশীল বিরোধী দল পিপলস পার্টির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে। অনুতিন তাদের সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি গণভোট আয়োজন এবং চার মাসের মধ্যে নির্বাচন ডাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে পিপলস পার্টি তার নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু সরকারের অংশ হবে না।
দেশ ছাড়লেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা: অনুতিনের এ জয় এমন এক সময়ে এলো, যখন থাইল্যান্ডের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা তার সাজার বিষয়ে আদালতের রায় আসার আগে দেশ ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে তিনি দুবাই চলে যান, যেখানে তিনি এর আগে দেড় দশক স্ব-নির্বাসনে ছিলেন।
১৫ বছর পর দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে ফেরার পর থাকসিন ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বের অভিযোগে আট বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে শুরু করেন। কিন্তু কারাগারে প্রথম রাতেই তাকে স্বাস্থ্যগত কারণে ভিআইপি উইংয়ে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার সাজা রাজার আদেশে এক বছরে কমিয়ে আনা হয় এবং ছয় মাস পর তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে, হাসপাতালে কাটানো সময় তার সাজার অংশ হিসেবে গণ্য হবে কি না। যদি তা না হয়, তবে তাকে আবার জেলে যেতে হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে থাকসিন জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসার জন্য দুবাই গেছেন এবং পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি আরও বলেন, আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনি দেশে ফিরবেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হবেন।
থাকসিনের হঠাৎ দেশত্যাগ এমন এক সময় হলো যখন তার দল ফেউ থাই পার্লামেন্ট ভেঙে অনুতিনের দলকে দুর্বল করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় তার দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চাইকাসেম নিতিসিরির পরাজয় ছিল এক চরম অপমান। অনুতিন মোট ভোটের ৬৩ শতাংশ পেয়েছেন, যা চাইকাসেমের প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণেরও বেশি।
ফেউ থাই দল অবশ্য এ পরাজয়ের পরও ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘আমরা ফিরে আসব এবং সব থাই মানুষের জন্য আমাদের কাজ শেষ করব।’
অনুতিনের প্রধানমন্ত্রীর পদে আরোহণ সিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এ পরিবারটি ২০০১ সাল থেকেই থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিল। তবে এখন তাদের ক্ষমতা অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন