কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৪১ এএম
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রপ্তানি আয়ে অব্যাহত মন্দা হাওয়া

নভেম্বর মাসের হিসাব
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের রপ্তানি আয়ে নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো দূরের কথা, এ খাতে গত বছরের অর্জনই ধরে রাখা যাচ্ছে না। অক্টোবরের পর নভেম্বর মাসে দেখা গেছে একই অবস্থা। এ সময় গত বছরের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। একই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়ে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। তৈরি পোশাক খাতের নেতিবাচক পরিস্থিতি সার্বিক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে পর্যালোচনায় দেখা গেছে।

নভেম্বর মাসে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ইপিবির প্রতিবেদন বলছে, ইউরোপ, আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, বাইসাইকেলসহ সব খাত মিলিয়ে গত নভেম্বরে রপ্তানি খাত থেকে আয় হয়েছে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রকৃত আয় ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। ২০২২ সালের একই মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫০৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ একক মাস হিসেবে ২০২২ সালের নভেম্বরের তুলনায় এ বছর নভেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে ৩০ কোটি ৭৭ লাখ বা ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া, সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কাসহ বিভিন্ন ধরনের সংকটের কারণে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইপিবির প্রতিবেদন বলছে, গত নভেম্বরে রপ্তানি আয়ের প্রাণভোমরা তৈরি পোশাক খাতে আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই শিল্পের দুই খাতেই রপ্তানি কমলেও নিটওয়্যারের তুলনায় ওভেন পোশাকে পতনের হার ছিল অনেক বেশি।

বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে রপ্তানি আয় আরও কমবে বলে পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিতে এ ধরনের নিম্নমুখী প্রবণতার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। প্রকৃতপক্ষে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলো ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে, যা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা এবং পণ্যের চাহিদা আরও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এই সংকটে আরও ইন্ধন যোগ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি বৈশ্বিকভাবে আরও কিছুটা কমবে এবং আমাদের কিছুটা হলেও সেই উত্তাপের মুখোমুখি হতে হবে। এ ছাড়া ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে অক্টোবরে শ্রম অসন্তোষের সময় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণেও রপ্তানি আয় কমায় প্রভাব ফেলেছে।’

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব মিলে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ২২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ১৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র এক দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে এ সময় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কম হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

খাতওয়ারি রপ্তানি আয়ের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ১২ লাখ ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক খাতের মধ্যে ১ হাজার ৯৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের নিট পোশাক ও ৭৮৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ে নিট পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ওভেন পোশাকের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর একক মাস হিসেবে নভেম্বরে ওভেন রপ্তানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং নিটওয়্যার কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়াও অধিকাংশ পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিপণ্যে রপ্তানি হয়েছে ৪২ কোটি ০৫ লাখ ডলারের পণ্য। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেইসঙ্গে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি হয়েছে ৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমেছে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্যে রপ্তানি আয় হয়েছে ৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২১ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

১০

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

১১

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

১২

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

১৩

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১৪

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১৫

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১৬

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৭

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৮

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৯

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

২০
X