রাজধানীর ধানমন্ডি লেকপার্কে চক্রের সদস্যদের নিয়ে ঘোরাফেরা করে মাহাদী হাসান জারিফ (২৫)। একা কোনো তরুণী বা কিশোরীকে পার্কে দেখলেই টার্গেট করে। এরপর সখ্য গড়ে তোলে। কারও অসহায়ের তথ্য পেলেই ‘মায়ার ফাঁদে’ ফেলে দেয়। এরপর সুযোগ মতো হাতিয়ে নেয় মোবাইল ফোন-টাকা। টার্গেট তরুণী ফাঁদে পড়লে কখনো কখনো নানা কৌশলে যৌননিপীড়নও চালায় জারিফ। গত সোমবার এভাবেই পার্ক থেকে নিয়ে ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে এএমএম সেন্টারের সাততলা পরিত্যক্ত ফ্লোরের বেলকনিতে নিয়ে এক তরুণীর ওপর পাশবিকতা চালায় ওই তরুণ।
ঘটনার পর পলাতক ছিল জারিফ। পাশবিকতার শিকার তরুণীও তার নাম বলতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল শহর থেকে ধর্ষণে অভিযুক্ত জারিফকে গ্রেপ্তার করলে বেরিয়ে আসে ওই তথ্য। ধানমন্ডি থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল শুক্রবার জারিফ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে গত সোমবার রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের আটিবাজার এলাকার বাসা ছেড়েছিলেন ২১ বছর বয়সী এক তরুণী। কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে বসে ছিলেন ধানমন্ডি লেকের পার্কে। সেখান থেকে জারিফ তাকে দুপুরে খাওয়ানোর কথা বলে নিয়ে যায় ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এলাকায় ৩/এ নম্বর রোডের এএমএম সেন্টারের একটি ভবনে। সেখানে তাকে রেস্টুরেন্টে না নিয়ে ভবনটির সাততলা পরিত্যক্ত ফ্লোরের বেলকনিতে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। স্বজনরা খবর পেয়ে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে ওই এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে পুলিশ তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। গত মঙ্গলবার তরুণীর বাবা ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় তরুণকে আসামি করে মামলা করেন।
ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ রাসেল কালবেলাকে বলেন, পার্কে তরুণীকে একা পেয়ে কৌশলে সখ্য গড়ে তুলেছিল জারিফ। আস্থা অর্জনের পর দুপুরে তাকে রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোর কথা বলে ওই ভবনে নিয়ে ধর্ষণের পর ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ওই তরুণ এর আগেও পার্কে তরুণীদের উত্ত্যক্ত করত বলে তারা জানতে পেরেছেন। সাইকেল চুরির অভিযোগে আটকও হয়েছিল। একবার মিরপুরেও আটক হয় সে। তার বিরুদ্ধে আগেও মামলা রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, জারিফের কোনো পেশা নেই। সে বখাটে প্রকৃতির ছেলে। তার বাবা দেশের বাইরে থাকলেও মা অন্যত্র বিয়ে করেন। ঘটনার পর ওই তরুণ বরিশালে তার মায়ের কাছে চলে গিয়েছিল। ঢাকার মিরপুরে সে মামার কাছে থাকত। টেনেটুনে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিল সে।
মন্তব্য করুন