দেশে অবৈধভাবে আসা বিদেশি সিগারেট বন্ধে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। মালপত্র জব্দ করা থেকে ফৌজদারি মামলা করারও নির্দেশনা রয়েছে। অথচ চট্টগ্রামের একে এন্টারপ্রাইজ গত ৬ মাসে ৮ লাখ ১১ হাজার ২৬০ মার্কিন ডলারের সিগারেট তৈরির উপকরণ আমদানি করেছে। যদিও উৎপাদনকারী ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক আমদানিকারকের সিগারেটের উপকরণ আমদানির বৈধ সুযোগ নেই। সর্বশেষ একে এন্টারপ্রাইজের আরও একটি পণ্য চালান আটক করেছে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্ট সেল (সিআইসি)। এতে প্রায় সাড়ে ৭ টন অরিস সিগারেটের ফয়েল পেপার মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, একে এন্টারপ্রাইজ দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে সিগারেট তৈরির উপকরণ নিয়ে আসছিল। গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি পিএক্স প্যালেট ঘোষণা দিয়ে এসব করছিল। বিষয়টি এনবিআর ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নজর এড়াতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের আমদানি তথ্য যাচাই-বাছাই করতে থাকে সিআইসি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাটের দলিল তলব করে তারা। তাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সন্দেহ বাড়তে থাকে। একে এন্টারপ্রাইজের দলিলাদি দেখার পরের দিন সিআইসি তার একটি কনটেইনার লক করে। পরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে পরীক্ষা করে প্রায় ৭ টন অরিস সিগারেট তৈরির ফয়েল পেপার পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক আমদানিকারক হওয়ায় সিগারেট তৈরির ফয়েল পেপার আমদানির সুযোগ তাদের নেই। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ইতোমধ্যে এ ধরনের একটি পণ্য চালান আটক করেছি, যা এখনো কাস্টম হাউসের জিম্মায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এসিডেট টু নিয়ে এসেছিল এবং কম মূল্য ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস করতে চেয়েছিল। একে এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে যদি এই ধরনের ঘটনা হয়, সেক্ষেত্রেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, একে এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ৭ হাজার ৫৬০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার নিয়ে এসেছে। ২৪ হাজার ২৮৮ কেজি পণ্য চালানের মধ্যে বড় অঙ্কের ছিল অরিস ব্র্যান্ডের সিগারেটের ফয়েল পেপার। বাংলাদেশে ভ্যাট নিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান অরিস ব্র্যান্ডের কোনো সিগারেট তৈরি করে না। এ ছাড়া একজন বাণিজ্যিক আমদানিকারক হিসেবে সিগারেট তৈরির উপকরণ আমদানি করা উদ্বেগজনক বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এসব ফয়েল পেপার দিয়ে নকল সিগারেট উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও ধারণা করছেন এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে কথা বলতে একে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী একেএম জিয়াউদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই পণ্য চালানের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ একতা ক্লিয়ারিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান কালবেলাকে বলেন, সিগারেটের ফয়েল পেপার আমদানিযোগ্য। এটার ট্যাক্স হবে। উৎপাদনকারী ছাড়া সিগারেটের ফয়েল পেপার আমদানির সুযোগ নেই বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আগ্রাবাদ ডিভিশনের অধীনে নিবন্ধিত। প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় তথ্য জানতে ইতোমধ্যে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধিত ঠিকানায় কাউকে পাওয়া যায়নি বলে ভ্যাট কর্মকর্তারা কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।