শারদীয় উৎসব মানেই সীমাহীন আনন্দ। ঢাকের তাল আর রাতভর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমা দর্শন। অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে শুরু করে নবমীর রাতের জমজমাট আড্ডা—সবকিছু মিলিয়ে পূজার
এ দিনগুলো যেন এক স্বপ্নের মতো কেটে যায়। কিন্তু রাতভর জেগে থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তো আছে। পূজার পর আয়নার সামনে দাঁড়ালেই ফুটে ওঠে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত এক মুখ। চোখের নিচে কালি, ফোলা ভাব প্রকট হয়ে ওঠে আর ত্বকের উজ্জ্বলতা যেন হারিয়ে যায়। তাই পূজার পর ত্বক, চুল ও হাত-পায়ের প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। কিন্তু ষষ্ঠী থেকে দশমী—বাইরে ঘোরাঘুরির কারণে শরীর ক্লান্ত থাকায় অনেকেই পার্লারে যেতে চান না। ঘরে বসেই কীভাবে ত্বক-চুল ও হাত-পায়ের যত্ন নেওয়া যায় তাই জানাচ্ছেন—বৃষ্টি শেখ খাদিজা
উৎসবের আনন্দ কি আর ক্লান্তির ভয়ে থেমে থাকে? তাই পূজার ঘোরাঘুরির পরও ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে পেতে প্রয়োজন কিছু সহজ কৌশল এবং সামান্য প্রস্তুতি। কয়েকটি ধাপে যা মেনে চললেই ফিরে পাওয়া যাবে হারানো উজ্জ্বলতা। শুরুটা তাহলে ত্বক দিয়েই হোক।
পূজার সময় এই মণ্ডপ থেকে সেই মণ্ডপে ঘোরাঘুরির জন্য খুব ভারী না হলেও সামান্য মেকআপ তো দিতেই হয়। আর দীর্ঘ সময় ত্বকে সেসব মেকআপ থাকার কারণে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। তাই পূজা শেষে ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। এজন্য একটি কার্যকর রুটিনের অন্তর্ভুক্ত হলো প্রতিদিন দুবার মুখ ধোয়া, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। এ ছাড়া, ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ক্লিনজার বাছাই করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা এবং নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
ত্বক পরিষ্কার: প্রতিদিন সকালে ও রাতে মুখ পরিষ্কার করুন। এটি ত্বক থেকে ময়লা, তেল এবং অন্যান্য দূষক দূর করতে সাহায্য করে।
ময়েশ্চারাইজিং: ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সূর্য থেকে সুরক্ষা: দিনের বেলায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
অতিরিক্ত টিপস
ক্লিনজার নির্বাচন: আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি মৃদু ক্লিনজার বেছে নিন, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করবে না।
ডাবল ক্লিনজিং: মেকআপ ব্যবহার করলে, প্রথমে তেলভিত্তিক ক্লিনজার এবং পরে জলভিত্তিক ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
নিয়মিত ব্যায়াম: ফেসিয়াল ম্যাসাজ করলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ত্বক টানটান থাকে।
প্রাকৃতিক উপাদান: মধু, দুধ, কলা, পেঁপে বা জবা ফুল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
পূজার পর চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে নিয়মিত তেল মালিশ করুন, মেথি ও দইয়ের মাস্ক ব্যবহার করুন, কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল আর্দ্র রাখুন। চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছুন এবং প্রয়োজনে চুলে তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে ও ময়লা সরাতে স্ক্যাল্পে স্ক্র্যাব ব্যবহার করুন।
চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়
তেল মালিশ: মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য নারিকেল তেল বা আমলকী-নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুল ঘন ও নরম করে এবং মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।
মেথি ও দইয়ের হেয়ার মাস্ক: দুই-তিন চামচ মেথি গুঁড়ার সঙ্গে টক দই মিশিয়ে একটি হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন। এ মাস্ক চুল নরম রাখে এবং চুল পড়া নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
নারিকেল দুধ ও অলিভ অয়েল মাস্ক: চার টেবিল চামচ নারিকেলের দুধের সঙ্গে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। পরিষ্কার চুলে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন, এটি চুলের রুক্ষতা কমাতে ও আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চুল ধোয়ার পর যত্ন
আর্দ্রতা ধরে রাখুন: চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনার বা সিরাম ব্যবহার করুন। এটি চুল আর্দ্র রাখে এবং তাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
আলতোভাবে মুছুন: তোয়ালে দিয়ে চুল ঘষবেন না, এতে চুলের কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অন্যান্য টিপস
স্ক্যাল্পে স্ক্র্যাব ব্যবহার: চুল ধোয়ার পরও মাথার ত্বকে ময়লা বা রং জমে থাকতে পারে। একটি ভালো মানের স্ক্যাল্প স্ক্র্যাব ব্যবহার করুন, যা মৃত কোষ এবং ময়লা আলতোভাবে পরিষ্কার করে।
পূজায় ঘোরাঘুরির ফলে সবচেয়ে বেশি ধকল যায় পায়ের ওপর দিয়েই। মণ্ডপে মণ্ডপে হাঁটাহাঁটি করা এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পায়ে ব্যথাও হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য পায়ের বাড়তি যত্ন তো নিতেই হবে। পূজার পর হাত-পায়ের ত্বকের শুষ্কতা, ট্যানিং বা রুক্ষতা দূর করতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, সপ্তাহে একবার স্ক্র্যাব করুন এবং সম্ভব হলে মেনিকিউর-পেডিকিউর করান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক উপাদান যেমন অলিভ অয়েল বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে হাত-পায়ের যত্ন নিন।
পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজিং
গভীর হাইড্রেশন: পূজার পর হাত ও পায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ও প্রাকৃতিক তেল যেমন অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল বা নারিকেল তেল লাগান।
রাতের পরিচর্যা: রাতে ঘুমানোর আগে হাত-পায়ে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিলে ত্বক সারা রাত ধরে পুষ্টি পাবে।
স্ক্র্যাবিং ও মৃত কোষ দূরীকরণ: সপ্তাহে অন্তত একবার হাত-পায়ের জন্য স্ক্র্যাব ব্যবহার করুন। এতে মৃত কোষ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।
প্রাকৃতিক স্ক্র্যাব: মসুর ডাল বাটা বা বেসন দিয়ে টক দই মিশিয়ে পায়ে স্ক্র্যাব করতে পারেন।
মেনিকিউর ও পেডিকিউর
পেশাদার সেবা: সম্ভব হলে পার্লারে গিয়ে মেনিকিউর ও পেডিকিওর করান। এটি হাত ও পায়ের রুক্ষতা দূর করে মসৃণতা ফিরিয়ে আনে। বাড়িতেও ঘরোয়া উপায়ে পেডিকিওর করতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে লবণ, শ্যাম্পু এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রেখে গোড়ালি ঝামা দিয়ে ঘষে নিন।
ভেতর থেকে সতেজ
শুধু বাইরের পরিচর্যাই যথেষ্ট নয়; ভেতর থেকে সতেজ অনুভব করাও জরুরি। এর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত পানি পান করা এর মধ্যে অন্যতম। রাত জাগার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। তাই সকাল শুরু হতে পারে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করার মাধ্যমে। সারা দিন ধরে পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস বা ডাবের পানি পান করা চাই। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিয়ে মন ঝরঝরে থাকতে সাহায্য করবে।
ক্লান্তি দূর করতে সঠিক নাশতাও খুব জরুরি। তৈলাক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা চাই। কারণ, এগুলো শরীর আরও ক্লান্ত করে তুলতে পারে। মিষ্টি খাবারের পরিপূরক হতে পারে ওটস, দই, বাদাম ও তাজা ফল। একটি কলা বা আপেল শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে পারে।
ক্লান্তি কাটাতে অনেকে চা বা কফির ওপর নির্ভর করেন। এক কাপ কফি শরীর চাঙা করতে পারে, তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরকে আরও ডিহাইড্রেটেড করে তোলে। তাই পরিমিত পান করাই শ্রেয়।
সার্বিক সুস্থতায় সতেজ স্নান
সকালে ঠান্ডা বা হালকা গরম পানিতে গোসল তাৎক্ষণিকভাবে সতেজতা দিতে সক্ষম। পছন্দের কোনো সুগন্ধি শাওয়ার জেল ব্যবহার করা যায়, যা মানসিকভাবেও ফুরফুরে করে তুলবে।
হালকা ব্যায়াম
জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের হালকা স্ট্রেচিং কিংবা একটু হেঁটে আসা শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেবে এবং জড়তা কাটাতে সাহায্য করবে।
মন্তব্য করুন