উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীতীরবর্তী চারটি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনাও হুমকির মুখে পড়েছে।
রোববার (০৫ অক্টোবর) বিকেল থেকে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ গ্রামসংলগ্ন নদীর পশ্চিম পাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে। এতে ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা তীব্র বন্যার ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিকেল ৪টার পর থেকে পানি বাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় ছুঁইছুঁই করছিল এবং সন্ধ্যার পর তা আরও বৃদ্ধি পায়। এর ফলস্বরূপ, পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের প্রায় আড়াই শতাধিক এবং পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের প্রায় এক শতাধিক বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাত ২টা ১১ মিনিটে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪৬ মিটার, যা বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে (স্বাভাবিক পানির উচ্চতা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার)। পানি বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিপৎসীমা আরও অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তীরবর্তী এলাকাবাসীকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জিও ব্যাগ সরবরাহ ও তদারকি করেছি। বর্তমানে বাঁধে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।
এ অবস্থায় বাঁধরক্ষায় স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন। তারা প্লাস্টিকের বস্তা ও জিও ব্যাগে বালু ও মাটি ভরে বাঁধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এতে নদীর পানির চাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা তারিফ জানান, খবর পেয়ে বিএনপির প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী বাঁধরক্ষায় কাজ করছে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরাও সহযোগিতা করছে।
অন্যদিকে, উজান থেকে ঢল নামার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীতীরবর্তী এলাকাবাসীকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করেছে এবং নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, আমি এখনো ঘটনাস্থলে আছি। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একত্রে বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে। এ ছাড়া পূর্ব ছাতনাই ও বার্নির ঘাট এলাকাতেও জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ ও সাধারণ মানুষ সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা বাঁধটি রক্ষা করতে সক্ষম হব। যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না জানান, তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে বর্তমানে রোপা আমন, চিনাবাদাম ও শাকসবজির চাষ চলছে। পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতি তেমন হবে না।
মন্তব্য করুন