অ্যানথ্রাক্স (Anthrax) হলো একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ, যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস (Bacillus anthracis) নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট হয়। এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। অত্যন্ত মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি, যা সাধারণত ছাগল, গবাদি পশু, ভেড়া এবং ঘোড়াসহ প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং মানুষকেও সংক্রমিত করতে পারে।
বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ সময় ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতা।
লক্ষণ
মানুষের অ্যানথ্রাক্স মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে। তাই প্রকারভেদে লক্ষণও ভিন্নতর হতে দেখা যায়। যেমন খাবারের মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর সংক্রমণ হলে সাধারণত হালকা জ্বর, বমি ভাব, পেটে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
আবার শরীরের বাইরের অংশে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর সংক্রমণ হলে ফোড়া বা গোটা হয়ে থাকে। ফোঁড়া ঠিক হয়ে গেলে হাতে, মুখে বা কাঁধের চামড়ায় কালো দাগ দেখা যেতে পারে। ফুসফুসের অ্যানথ্রাক্স হলে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা হতে দেখা যায়। আসুন, একনজরে তিন প্রকার অ্যানথ্রাক্স রোগের লক্ষণ জেনে নিই—
ত্বকের অ্যানথ্রাক্স (কিউটেনিয়াস অ্যানথ্রাক্স)
চুলকানিযুক্ত ছোট ফোসকা দেখা দেয়,
পরে এটি ব্যথাহীন কালো ঘা হয়
হাতে, মুখে বা কাঁধের চামড়ায় কালো দাগ হয়
ফুসফুসের অ্যানথ্রাক্স (ইনহেলেশনাল অ্যানথ্রাক্স)
জ্বর n ঘাম n বমি বমি ভাব n শ্বাসকষ্ট
অস্থিরতা n বুকে ব্যথা n কাশি
অন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স
বমি বমি ভাব n বমি
ডায়রিয়া n পেটে ব্যথা
হালকা জ্বর n মাংসপেশিতে ব্যথা n গলাব্যথা
কারণ
অ্যানথ্রাক্স রোগের মূল কারণ ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস ব্যাকটেরিয়া। ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে তিনভাবে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। যেমন—
ত্বকের মাধ্যমে: পশুজাত পণ্য (পশম, হাড়) থেকে ত্বকের কাটা বা আঁচড়ে প্রবেশ করে
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে: ব্যাকটেরিয়ার রেণু শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে
খাবারের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে সংক্রমণ হতে পারে
চিকিৎসা
অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও টিকার মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রতিরোধ
অ্যানথ্রাক্স রোগ সাধারণত বন্য এবং গৃহপালিত লতাপাতাভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আক্রান্ত
করে। প্রাণীরা ঘাস খাওয়ার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের শিকার হয়। আর আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে
এলে বা আক্রান্ত প্রাণীর মাংস খেলে মানুষের শরীরেও অ্যানথ্র্যাক্স রোগ দ্রুত সংক্রমিত
হতে শুরু করে।
তাই এ রোগ প্রতিরোধে গৃহপালিত পশুকে সঠিক সময়ে টিকা দিন। রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি যে কোনো মাংস কাটা, ধোয়া ও রান্নার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। হাতে বা শরীরের কোথাও কাটা অংশ থাকলে মাংস কাটা, ধোয়া ও রান্না থেকে বিরত থাকুন। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় নিয়ে উচ্চতাপে রান্না করুন।
মন্তব্য করুন