

তুমি অনেক মোটা! ওজন কমাও না কেন? তুমি কি আবার ওজন বাড়িয়েছ? এত খাওয়ার দরকার আছে? কিংবা তুমি এত শুকনা কেন?—এ ধরনের কথাগুলো প্রায়ই রসিকতার ছলে বলা হয়। কিন্তু জানেন কি, এ কথাগুলোই অনেক সময় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাসে। বডি শেমিংয়ের প্রভাবে আমাদের কী কী ক্ষতি হয় এবং এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে কীভাবে দূরে সরিয়ে রাখা যায়, তা নিয়ে লিখেছেন—বৃষ্টি শেখ খাদিজা
বডি শেমিং শব্দটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। বডি শেমিং হলো এমন একটি আচরণ যেখানে কাউকে তার শরীরের গঠন, ওজন বা চেহারা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। শুধু অন্যের কাছ থেকে নয়, আমরা নিজেরাও কিন্তু নিজেদের প্রতিও এমন আচরণ করি। যেমন, অনেক সময় বলে থাকি আজ নিজেকে খুব মোটা লাগছে বা মোটা হয়ে গিয়েছি, আমার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন উপায়ে বডি শেমিং হতে পারে। কখনো তা সামনাসামনি আবার কখনো তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা হয়। এমনকি অনেক সময় পরিবার বা কাছের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও অনিচ্ছাকৃতভাবে শরীর বা চেহারা নিয়ে এমন মন্তব্য করেন, যা মানসিকভাবে কষ্ট দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়া ও বডি শেমিং
ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ফেসবুকের স্ক্রিনে স্ক্রল করলেই চোখে পড়ে নিখুঁত ত্বক, ছিপছিপে গড়ন আর অবাস্তব সৌন্দর্যের ছবি। এই ‘পারফেক্ট’ ইমেজগুলোই অনেক সময় আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে হীনম্মন্যতা। এদিকে, ডিজিটাল যুগে মন্তব্য করা যেমন সহজ, তেমনি অন্যকে আঘাত করাও। ফলে অনেকেই অনলাইনে ‘সাইবার বুলিং’ বা বডি শেমিংয়ের শিকার হন, যা আত্মসম্মান ও মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। সম্প্রতি একটি ঘটনা বেশ আলোচনা তৈরি করেছে। তাসনিম তমা নামে একজন মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন যার ওজন ছিল ১০০ কেজির বেশি। মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার সুবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় ছিলেন তমা। আর সেখানেই তাকে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্যের মাধ্যমে বডি শেমিং করা হয়েছিল। মন্তব্যগুলো ছিল এমন—এই মেকআপ আর্টিস্টটা তো মোটা! নিজের মুখটা আগে আয়নায় দেখো! এমন শরীরে কেমন করে বিউটি টিপস দেয়! শেষমেশ এই মেকআপ আর্টিস্ট ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং শুরু করেন ওম্যাড ডায়ের (One meal a day)। কিন্তু তিনি নেননি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ। ফলস্বরূপ, শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয় তাকে।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বডি শেমিংয়ের প্রভাব
কৈশোরে নিজের চেহারা ও শরীর নিয়ে সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এ সময়ের সামান্য মন্তব্যও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শরীর নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য বা নিজের চেহারা নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখানো মেয়ের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। আবার ছেলেদের ক্ষেত্রেও তুমি যথেষ্ট পেশিবহুল নও বা তুমি খুব দুর্বল—এসব মন্তব্য অনেক সময় অনিরাপত্তা তৈরি করে। ফলস্বরূপ, কিশোররা নিজেদের শরীর নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে শুরু করে, যা থেকে জন্ম নেয় বিষণ্নতা, খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা, এমনকি সামাজিক দূরত্ব।
বডি শেমিংয়ের মানসিক প্রভাব
বডি শেমিং শুধু শরীর নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে। এটি থেকে জন্ম নিতে পারে—
n আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান কমে যাওয়া
n উদ্বেগ ও হতাশা
n অতিরিক্ত ডায়েটিং বা খাদ্যাভ্যাসে অস্বাভাবিকতা
n সামাজিক পরিসর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া
যুগের সঙ্গে সঙ্গে ‘পারফেক্ট’ সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যেন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। র্যাম্পের সুপার মডেল হোক বা ব্যালেরিনা নৃত্যশিল্পী—সবারই আছে নিজস্ব অসম্পূর্ণতা। কিন্তু আমরা এখনো তাদের সৌন্দর্যের শেষ কথা ভাবি। ফলে তাদের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে গিয়ে অনেকেই মনে করেন, আমি যথেষ্ট সুন্দর নই। আর যখন এ ধারণা অন্যদের নেতিবাচক মন্তব্যের মাধ্যমে দৃঢ় হয়—তখন তা জন্ম দেয় এক অদৃশ্য, কিন্তু ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণার নাম ‘বডি শেমিং’। এ ছাড়া যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা হলো—
খাবারের প্রতি ভয়
নেতিবাচক শরীরচিত্র বা negative body image অনেক সময় খাবারের আচরণকে অস্বাভাবিক করে তোলে। কেউ কেউ শরীরের আকার বদলাতে গিয়ে কঠোর ডায়েটে চলে যান, খাবার বাদ দেন, অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন বা ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার শুরু করেন। ধীরে ধীরে এ অভ্যাস পরিণত হয় অ্যানোরেক্সিয়া, বুলিমিয়া বা বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডারে। অন্যদিকে, ‘তুমি ওজন কমিয়েছ? দারুণ দেখাচ্ছে’—এ ধরনের প্রশংসাও অনেক সময় ট্রিগার হয়ে ওঠে, যা আরও অস্বাস্থ্যকর ডায়েটিং বা আত্মনিয়ন্ত্রণের চাপে ঠেলে দেয়।
বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার (BDD)
শরীর নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকে তৈরি হয় বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার। তখন মানুষ নিজের শরীরের ক্ষুদ্র কোনো দাগ, তিল বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে অতিমাত্রায় চিন্তিত হয়ে পড়ে। কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আয়নায় তাকিয়ে থাকে, আবার কেউ সম্পূর্ণ আয়না এড়িয়ে চলে। এমন মানসিক অবস্থায় স্কুল, বন্ধুত্ব, এমনকি পারিবারিক সম্পর্কও ভেঙে পড়তে শুরু করে। অনেক সময় এ অসহায়তা থেকে জন্ম নেয় হতাশা, আত্মঘৃণা কিংবা আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফাঁদে
শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো—এ সত্য অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু যখন ব্যায়াম এক ধরনের বাধ্যতা হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা হয়ে ওঠে ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরে Relative Energy Deficiency in Sport (RED-S) নামের সিন্ড্রোম তৈরি করতে পারে, যেখানে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্লান্তি, আঘাত, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা—সবই তখন নিত্যসঙ্গী।
উদ্বেগ ও বিষণ্নতা
যখন কেউ নিজের শরীর নিয়ে লজ্জা পেতে শুরু করে, তখন আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়। আমি কুৎসিত, আমার কোনো মূল্য নেই—এমন চিন্তা মনকে গ্রাস করে। ফলাফল—অবসাদ, সামাজিক দূরত্ব, আত্মঘৃণা। বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রকাশ্যে বডি শেমিং মানে অনলাইন অপমান ও একাকিত্বের যন্ত্রণায় পুড়ে যাওয়া।
বডি শেমিংয়ের প্রভাব কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়?
n নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে বলুন, আমি যেমন সেভাবেই নিজেকে ভালোবাসি। প্রতিদিন নিজের গুণগুলো মনে করুন।
n নেতিবাচক কথা উপেক্ষা করুন। অন্যের মন্তব্যকে নিজের পরিচয় বানাবেন না।
n সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সচেতনতা আনুন। এমন কনটেন্ট অনুসরণ করুন, যা শরীর ও মন দুটোই ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।
n সহযোগিতা নিন। প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলুন।
n সুস্থ জীবনযাপন করুন। ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এগুলোই আপনাকে ভেতর থেকে সুন্দর রাখবে।
সবশেষে সুখবর হলো—বিশ্বজুড়ে এখন চলছে বডি পজিটিভিটি আন্দোলন। আমার শরীর, আমার গর্ব—এ মন্ত্রে মানুষ শিখছে নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে। ইনস্টাগ্রামের #BodyPositivity বা #LoveYourBody হ্যাশট্যাগ এখন শুধু ট্রেন্ড নয়, বরং এক ধরনের মানসিক মুক্তি। তবে মনে রাখতে হবে, সৌন্দর্য কোনো মাপজোখ নয়, এটি অনুভবের বিষয়। যেমন বলা হয়, ‘Beauty is in the eye of the beholder’ অর্থাৎ, সৌন্দর্য খুঁজে নিতে হয় মনের ভেতরেই।
নেতিবাচক চিন্তাকে বদলে দিন ইতিবাচক ভাবনায়
‘আমি আমার শরীরকে যেমন, ঠিক তেমনই ভালোবাসি’—এই একটি বাক্য আপনার আত্মবিশ্বাসের সূচনা হতে পারে। আমরা অন্যদের মন্তব্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু নিজের মনের কথা বদলাতে পারি। নিজের ত্রুটির দিকে নয়, মনোযোগ দিন নিজের শক্তি ও সৌন্দর্যের দিকে। আয়নায় তাকিয়ে শুধু ‘অপছন্দের’ দিক নয়, বরং চোখ, চুল বা হাসির মতো বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করুন। নেতিবাচক চিন্তার পরিবর্তে নিজেকে বলুন, আমার শরীর সুন্দর ও সুস্থ। নিজস্বতা নিয়েই গর্বিত থাকুন—কারণ আপনার মূল্য কখনোই চেহারায় নয়, চরিত্রে ও মানবিকতায়। যদি এখনো পুরোপুরি ‘বডি পজিটিভিটি’ গ্রহণ করা কঠিন মনে হয়, শুরু করুন ‘বডি নিউট্রালিটি’ দিয়ে। ভাবুন ‘আমার পা আমাকে দূরত্বে হাঁটতে সাহায্য করে’—এটাই শরীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
অন্যদের বডি শেম করবেন না
গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যদের শরীর নিয়ে ইতিবাচক কথা বললে নিজের শরীর সম্পর্কেও ভালো লাগা তৈরি হয়। সুতরাং এমন মানুষদের সঙ্গে থাকুন যারা সম্মানজনক। সীমারেখা তৈরি করুন—আপনার শরীর বা ওজন নিয়ে মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অন্য কেউ বডি শেমের শিকার হলে পাশে দাঁড়ান।
সোশ্যাল মিডিয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করুন
অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার আমাদের আত্মবিশ্বাসকে ক্ষয় করে। অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ডে নিজেকে মাপতে গিয়ে আমরা ভুলে যাই—বাস্তব জীবনের সৌন্দর্য কত বেশি সত্য ও মানবিক। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন, কথা বলুন। শরীরচর্চা করুন—হাঁটা, নাচ, দৌড় বা সাঁতার মন ও শরীর দুটোই চাঙা রাখে। মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন—যোগ, মেডিটেশন বা ডায়েরি লেখা মানসিক প্রশান্তি দেয়।
খাবারের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন
‘খাবার শত্রু নয়, এটি আমাদের শরীর ও মনের জ্বালানি।’ ওজন বা শরীর নিয়ে লজ্জা অনেক সময় খাবারের প্রতিও ভয় তৈরি করে। কিন্তু ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ বা সচেতনভাবে খাওয়ার অভ্যাস এ ভয়কে দূর করতে পারে। খাওয়ার সময় ফোন, টিভি বা ব্যস্ততা থেকে দূরে থাকুন। প্রতিটি কামড়ের স্বাদ অনুভব করুন, শরীরের চাহিদা শুনুন। পুষ্টিকর খাবারের পরিকল্পনা করুন বা নতুন রেসিপি চেষ্টা করুন।
ভরসার কাউকে বলুন আপনার কথা
অনেক সময় আমরা লজ্জা বা ভয় থেকে নিজের কষ্টের কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করতে চাই না। বিশেষ করে যখন বিষয়টা শরীর নিয়ে উপহাস বা বডি শেমিংয়ের মতো সংবেদনশীল কিছু হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, একা এ পরিস্থিতি সামলানোর দরকার নেই। যে মানুষটির প্রতি আপনি আস্থা রাখেন, হতে পারে সে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পরিবারের কেউবা সহকর্মী—তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। নিজের অনুভূতি শেয়ার করার এ নিরাপদ জায়গাটা আপনাকে মানসিকভাবে অনেকটা স্বস্তি দেবে। এতে আপনি ধীরে ধীরে বডি শেমিংয়ের কারণে হওয়া কষ্ট ও অপমান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। প্রয়োজনে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতেও দ্বিধা করবেন না। একজন কাউন্সেলর বা থেরাপিস্ট নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরামর্শ দিতে পারেন, যা আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে ও সুস্থভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
প্রিয়জনকে সাহায্য করবেন যেভাবে
যদি আপনার প্রিয় কেউ বডি শেমিংয়ের শিকার হয়, আপনার সহানুভূতি ও সমর্থন তার জন্য অনেক বড় শক্তি হতে পারে। তাকে জানান আপনি তার পাশে আছেন—বলতে পারেন, ‘তুমি নিজের শরীর নিয়ে এত কষ্ট পাও, সেটা আমাকে দুঃখ দেয়’ অথবা ‘তুমি নিজের ব্যাপারে এমন নেতিবাচক কথা বললে আমি চিন্তা করি।’ ধৈর্য ধরুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ধরে নেবেন না আপনি জানেন কীভাবে তাকে সাহায্য করতে হবে—বরং জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কীভাবে তোমাকে সবচেয়ে ভালোভাবে সমর্থন করতে পারি?’ অনেক সময় তারা শুধু একজন মনোযোগী শ্রোতা বা কান্নার কাঁধ চায়। চেষ্টা করুন তাদের দৃষ্টি শরীর থেকে সরিয়ে অন্য গুণের দিকে নিতে—তাদের হাস্যরস, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, সৃজনশীলতা বা কোনো বিশেষ প্রতিভা তুলে ধরুন।
যদি আপনার সন্তান বডি শেমিংয়ের শিকার হয়
সন্তান বা কিশোর সন্তানকে কেউ শরীর নিয়ে উপহাস করলে সেটা শোনাটা বাবা-মায়ের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—সন্তানকে বোঝান কীভাবে বডি শেমিং একটি অগ্রহণযোগ্য আচরণ। শেখান, নিজের ও অন্যের প্রতি সম্মান দেখানো কতটা জরুরি। স্কুলে জানিয়ে দিন—যদি বিষয়টি ক্লাস বা স্কুলে ঘটে থাকে, তাহলে শিক্ষক বা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুন। নতুন বন্ধুত্বে উৎসাহ দিন। খেলাধুলা, ক্লাব বা সহশিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে। নিজে হোন রোল মডেল। নিজের শরীর নিয়ে ইতিবাচক কথা বলুন, নেতিবাচক মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন। শিশুরা আপনাকেই অনুসরণ করে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত করুন। সন্তানের অনলাইন জীবন সম্পর্কে সচেতন থাকুন—তারা কী দেখছে, কী শেয়ার করছে, সেদিকে নজর দিন। নিঃশর্ত ভালোবাসা দিন। বারবার আশ্বস্ত করুন যে, আপনি তাকে ভালোবাসেন—তার ভেতরের গুণাবলি এবং বাহ্যিক রূপ দুটোই আপনাকে সমানভাবে মুগ্ধ করে। সুস্থ জীবনযাপনে উৎসাহ দিন, কিন্তু চেহারা নয়। ওজন, ডায়েট বা শরীর নিয়ে নয়, বরং শরীর কী কী দারুণ কাজ করতে পারে; সে বিষয়ে কথা বলুন। সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ বা সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন। এসব কার্যক্রম মানসিক শক্তি বাড়ায়, উদ্বেগ কমায় এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।
বডি শেমিং মোকাবিলা এক দিনে সম্ভব নয়। কিন্তু সহানুভূতি, যোগাযোগ আর সঠিক সমর্থন এ যাত্রাটা অনেক সহজ করে তুলতে পারে। মনে রাখবেন—শরীর নয়, আপনার মূল্য নির্ধারণ করে আপনার মানবিকতা, প্রতিভা ও ভালোবাসা। আমাদের শরীরই আমাদের গল্পের অংশ। তাই অন্যের তুলনায় নিজেকে ছোট ভাবা নয়, নিজের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান দেখানোই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।
মন্তব্য করুন