

ইদানীং হঠাৎ জ্বর, সর্দি বা দুর্বলতা যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে—বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, প্রায় সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, দূষণ, ভাইরাস সংক্রমণ—সব মিলিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তবে চিন্তার কিছু নেই! প্রকৃতির কাছেই আছে সমাধান। কিছু সাধারণ খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের ভেতর থেকেই গড়ে উঠবে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
চলুন জেনে নিই কোন কোন খাবার আপনাকে রাখবে সুস্থ ও সবল
টক জাতীয় ফল : ভিটামিন ‘সি’র শক্তি
ভিটামিন ‘সি’ শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা দেয়। যে ফলগুলো খাবেন—লেবু, লাইম, কমলালেবুসহ সব ধরনের টক জাতীয় ফল।
হলুদ : প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি
ও ইমিউন বুস্টার
হলুদের কারকিউমিন উপাদান প্রদাহ কমায় ও শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। নিয়মিত খাবারে অল্প হলুদ মেশালে ইমিউনিটি বেড়ে যায়।
ব্রকোলি : ভিটামিন ও ফাইবারের ভান্ডার
ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ব্রকোলি শুধু ইমিউন সিস্টেম নয়, অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
দই : অন্ত্রের সুরক্ষক
দইয়ের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ও ভিটামিন ‘ডি’ শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সাধারণ দইয়ের সঙ্গে কলা বা আপেল মিশিয়ে খেলে বাড়ে পুষ্টিগুণ।
শাক : অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
পালংশাক ও অন্যান্য সবুজ শাকে আছে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ বিটা-ক্যারোটিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চোখের জন্যও উপকারী।
আদা : গলার আরাম ও প্রদাহ কমায়
আদায় থাকা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক উপাদান গলাব্যথা ও ঠান্ডার উপসর্গ কমায়, পাশাপাশি শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।
রসুন : প্রাচীন ঔষধি খাবার
রসুনের সালফার যৌগ সংক্রমণ রোধ করে ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। প্রতিদিনের রান্নায় কয়েক কোয়া রসুন যোগ করুন।
গ্রিন টি : অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ারহাউস
গ্রিন টিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও ইজিসিজি (EGCG) ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গরম পানিতে ভিজিয়ে চা তৈরি করুন, যাতে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।
সূর্যমুখী বীজ : ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী
ভিটামিন, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ এই বীজ শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম বাড়ায় এবং ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় রাখে।
কাজুবাদাম : স্বাস্থ্যকর চর্বি ও
ভিটামিন ‘ই’র উৎস
নিয়মিত বাদাম খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে এবং শরীর পায় প্রাকৃতিক শক্তি ও সুরক্ষা।
লাল ক্যাপসিকাম : কমলার চেয়ে
তিন গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’
এতে আছে বিটা-ক্যারোটিন, যা চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
পোলট্রি : প্রোটিন ও ভিটামিন
বি৬ (B6)-এর ভান্ডার
মুরগির মাংস ও ডিম শরীরে নতুন রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
কিউই : ছোট ফলে ভরপুর পুষ্টি
ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর কিউই শরীরের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
পেঁপে: পেপেন এনজাইমে প্রদাহ কমায়
পেঁপেতে থাকা ভিটামিন ‘সি’, ফোলেট ও ম্যাগনেশিয়াম শরীরকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে।
ব্লুবেরি : শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষক
ফ্ল্যাভোনয়েডসমৃদ্ধ ব্লুবেরি ফ্রি র্যাডিকেল দমন করে ও সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এই প্রাকৃতিক খাবারগুলোকে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। শুধু জ্বর বা সংক্রমণের সময় নয়, প্রতিদিনই সঠিক পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে গড়ে তুলুন এক শক্তিশালী, জীবনীশক্তিতে ভরপুর শরীর।
মন্তব্য করুন