বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণসহ শ্রমবাজার সম্পর্কিত তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা বুধবার (২১ মে) ঢাকায় শুরু হবে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের ১৪ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছেন।
বৃহস্পতিবার সভা শেষে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সরকারের মধ্যে শ্রমিক নেওয়া সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আগামী ছয় বছরে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক পাঠানোর ঘোষণা আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ১৪ মে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সভায় অংশ নেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফি সিদ্দিকি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া এবং উপসচিব সারোয়ার আলম।
ওই সভায় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে যে মামলা রয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি চাওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্ন এজেন্সির সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ‘হয়রানিমূলক’ মামলা হয়েছে, যা মালয়েশিয়া সরকারের অভিবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই মালয়েশিয়া দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি চেয়েছে। শ্রমিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা, অভিবাসন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সহযোগী এজেন্সি প্রথা বাদ দেওয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বায়রার একাধিক নেতা জানান, যখনই সরকার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার উদ্যোগে নেয়, তখই বায়রার বিপথগামী একটি গ্রুপ প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। বাজার খুলতে বাধা দেয়। এই গ্রুপটি মূলত অবৈধভাবে শ্রমিক পাঠানোর চক্রে জড়িত। তারা চায় না বৈধভাবে শ্রমিক যাক। কারণ বৈধভাবে শ্রমিক গেলে তাদের অবৈধ শ্রমিক পাঠানোর কারবার হুমকির মুখে পড়ে। এছাড়া কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি অযৌক্তিক অতিরিক্ত ফি আদায়ের সুযোগ চায়।
এতে শ্রমবাজারে বাণিজ্যিক অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়ে। অভিবাসন ব্যয় কম থাকলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না। সহযোগী এজেন্সি ব্যবস্থাও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি করে। সরকারের উচিত এমন একটি কাঠামো গড়ে তোলা, যাতে শ্রমিকরা ২ লাখ টাকার মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন- এতে তাদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বিশাল শ্রমবাজার ফের চালু হলে বাংলাদেশ এবং অভিবাসী কর্মী- দুপক্ষই উপকৃত হবে। এতে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। জনশক্তি রপ্তানী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, নিয়োগকারী দেশ মালয়েশিয়া সরকারের আভ্যন্তরীণ নীতি ও কর্মীদের স্বার্থ বিবেচনায় না এনে বায়রার কিছু সদস্য পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, মিটিং-মিছিল, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রভৃতি অব্যাহ রেখেছে যা মালয়েশিয়া সরকার ভালোভাবে গ্রহণ করছে না।
পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলার খবর দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত রিপোর্টগুলো মালয়েশিয়া সরকারকে বিব্রত করছে। ভুল তথ্য সম্বলিত রিপোর্টের কারণে আইএলও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ মালয়েশিয়ার পণ্য আমদানিকারক দেশগুলো মালয়েশিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এই প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকারের মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় দু’দেশ এবং কর্মীদের স্বার্থে সেদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করণের নিমিত্তে এসব সমস্যার আশু সমাধান চায়। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর স্বার্থগত বিরোধের কারণে মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাব গ্রহণে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে শ্রমবাজারটি দীর্ঘদিনের জন্য হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারে স্বল্প ব্যয়ে কর্মীদের নিরাপদ ও লাভজনক অভিবাসনের লক্ষে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থের পরিবর্তে কর্মীদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করে শ্রমবাজার খুলে দিতে হবে।
মালয়েশিয়া সরকারের নীতি এবং সে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দুই সরকারের মধ্যে ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাজার খুলতে হবে। নিয়োগকারী দেশ হিসেবে মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবকে অধিকতর গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরি।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশকে সবার আগে অগ্রাধিকার দেবে। মালয়েশিয়ায় সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ার গিভার, নার্সসহ বিভিন্ন সেক্টরে স্কিল ওয়ার্কার নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় বিষয়গুলো আলোচনা হবে।
মন্তব্য করুন