চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা নিঃসন্দেহে একটি তাৎক্ষণিক স্বস্তির বার্তা। কিন্তু বিষয়টি শুধু হার কমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একইসঙ্গে এক ধরনের সতর্ক সংকেতও, যা আমাদের রপ্তানি কাঠামোর ওপর নির্ভরশীলতা, বৈচিত্র্যহীনতা এবং দুর্বল বাণিজ্য কূটনীতির বাস্তবতা সামনে নিয়ে এসেছে।’
হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এই শুল্ক হ্রাস বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও এটি আসলে একটি কৌশলগত দরকষাকষির ফল। আমরা সয়াবিন, তুলা, এমনকি বড় আকারের কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক ধরনের ভারসাম্য তৈরি করেছি। কিন্তু এই ভারসাম্য রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য কতটা টেকসই হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।’
তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বাজারপ্রবণতা কিছুটা সহনশীল করলেও, এটা যদি আমাদের রপ্তানির একমুখিতা না ভাঙে এবং কাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, তাহলে এই সুবিধা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বিশ্ববাজারে প্রতিনিয়তই প্রতিযোগিতা বাড়ছে, আর আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম- তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আরও কৌশলী চুক্তি করতে পারে। তখন বাংলাদেশ আবার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে রপ্তানিনির্ভরতা কমিয়ে নতুন বাজার সৃষ্টির দিকে গুরুত্বারোপ করা উচিত।
হেলাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতি এখনো প্রতিক্রিয়াশীল। রপ্তানির যে ঝুঁকিপূর্ণ নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর, তা যদি আমরা নতুন বাজারে প্রবেশ ও পণ্য বৈচিত্র্যের মাধ্যমে মোকাবিলা না করি, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের শুল্ক বাড়ানো আবারও চাপে ফেলবে। রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি নীতি, পণ্য গুণমান, অবকাঠামো ও নীতিগত স্বচ্ছতা- এই সবকিছুকে সমন্বিতভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ কেবল শুল্ক কমলে বা কয়েকটি চুক্তি হলেই স্থায়ী সমাধান আসবে না। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি কৌশল, যেখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এবং বৈচিত্র্যময় বাণিজ্য সংযোগ- এ তিনটি স্তম্ভ একসঙ্গে কাজ করবে। তা না হলে আজকের স্বস্তি কালকের ঝুঁকিতে রূপ নিতে পারে।’
মন্তব্য করুন