অর্থ পাচারকারীদের কাছে ডলারের দর কোন বিষয় না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন।
তিনি বলেন, ডলারের দর ১৩০ টাকা হলেও তারা পাচার করবেই। আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে বৈঠক শেষে এমন মন্তব্য করেন তিনি। বৈঠকে বিদেশে আটকে থাকা রপ্তানি আয় দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে আবারও তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে ঋণের সুদহার বেড়ে গিয়ে তারল্যের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে আমানতের সুদহারও বেড়ে যাবে। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বৈধ মাধ্যমে অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে রেমিট্যান্স না এসে হুন্ডির মাধ্যমে আসছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাই ডলারের দর আরও বাড়ানোর খবর শোনা যাচ্ছে। সভা শেষে ডলারের দর বাড়ানো হবে কিনা সেই বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাফেদা নির্ধারিত দরেই ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। যারা হুন্ডি করে টাকা পাচার করে, তাদের ব্যাংক ১৩০ টাকা দিলে হুন্ডিওয়ালারা ১৪০ টাকা দেবে। কারণ, এখানে টাকা কোনো ব্যাপার না। এটা তো কালো টাকা। এই কালো টাকা যারা পাচার করে তারা যে কোন মূল্যেই সেটা করবে। এজন্য হুন্ডির সঙ্গে ডলারের দর মেলানোর কোনো দরকার নেই।
তিনি বলেন, কার্ব মাকের্ট বা খোলা বাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় কার্ব মার্কেটের বাজার খুব ছোট। এই বাজারে বছরে তিন থেকে চার কোটি ডলার লেনদেন হয়। ফলে কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময় হার কত বা তাকে মানদণ্ড হিসেবে দেখানোর প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন। এসময় দেশের বাইরে আটকে থাকা বকেয়া রপ্তানি আয় দ্রুত দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে আবারও তাগাদা দিয়েছেন গভর্নর।
আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে এবং সংস্থাটির ঋণের শর্তাবলি কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। দেশের কয়েকটি ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গেও আইএমএফ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা গভর্নরকে অবহিত করেন। এছাড়া, গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে মরক্কো গিয়েছিলেন এবং সে বিষয়ে ধারণা দিতেই আজকের বৈঠক হয়েছে বলে জানান ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পলিসিগুলো তাদের অবহিত করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এখন মূল লক্ষ্য। এটা করতে গিয়ে কলমানি রেট বেড়ে গেছে, আমানত, টেজ্রারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসির অংশ। এর ফলে মানি সাপ্লাই কমে যাবে। এক্সপোর্ট পেমেন্ট আরও দ্রুত করতে বলা হয়েছে। আমদানি মূল্য পেমেন্ট করতে হচ্ছে কিন্তু রপ্তানি আয় পেতে দেরি হচ্ছে। ফলে ক্যাশ ফ্লো কম হচ্ছে। ডেফার পেমেন্ট নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে।
হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার কমাতে কোনো পদক্ষেপ সম্প্রতি নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, রেগুলার মনিটরিং হচ্ছে। রপ্তানি আয় প্রত্যাবসন ও আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নজরদারি করা হচ্ছে। যেখানে সন্দেহ হচ্ছে সেখানে তদারকি জোরদার করা হচ্ছে। রেমিট্যান্সের কোন অ্যাকাউন্টে কত টাকা আসছে সেটাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন