কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা জার্মানির তৈরি দুটি পাইপ কাটারের দাম দেখানো হয়েছে ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একইভাবে জার্মান কোম্পানির দুটি হাতুড়ির দাম দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
এসব পণ্যের এমন অস্বাভাবিক দাম দেখে চালানটি আটকে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তারপর এসব পণ্য আমদানিকারক সিপিজিসিবিএল ও পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, শুধু এই দুটি পণ্য নয়, এই চালানের ১৯টি পণ্যই অযৌক্তিক উচ্চমূল্যে আমদানি করা হয়েছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা এ চালানটির আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে ২ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বা ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৩ মার্কিন ডলার।
চালানটিতে থাকা অন্যান্য টুলসের মধ্যে রয়েছে সেট মেকানিক্যাল প্লায়ার, মাঙ্কি প্লায়ার, টুলবক্স, চিসেল অ্যান্ড স্পান্সার, স্প্যানার এবং কার ফিটার সেট। এসব পণ্য সরবরাহ করে জাপানের সুমিটোমো করপোরেশনের পক্ষ থেকে কেএস টুলস ওয়ার্কজেউজ।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাইপ কাটার টুলের দাম ডেটাবেস মূল্যের চেয়ে ১৮ হাজার ৫৪৫ গুণ, পাইপ রেঞ্চ ১ হাজার ৫৩ গুণ, মাঙ্কি প্লায়ারের দাম ৯১২ গুণ, স্ক্রু ড্রাইভারের দাম ৮৩৩ গুণ এবং হাতুড়ির দাম ১১২ গুণ বেশি।
জার্মান কোম্পানি কেএস টুলসের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, একই মানের একটি পাইপ কাটারের দাম ৬০ দশমিক ২৭ ইউরো বা প্রায় ৭ হাজার ২৩২ টাকা। সে হিসাবে মূল্য ৬৪২ গুণ বা ৬৪২০০ শতাংশ বেশি দেখানো হয়েছে।
কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী একটি হাতুড়ির দাম ১৩ দশমিক ৯ ইউরো বা ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। আমদানি মূল্যে যার দাম ৫৫ গুণ বা ৫৫০০ শতাংশ বেশি দেখানো হয়েছে।
এনবিআরের নথি অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে মাতারবাড়ী প্রকল্পের জন্য একটি চালান খালাস করে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। ইথারনেট সুইচ বা নেটওয়ার্ক সুইচ নামেও পরিচিত এ পণ্যটি জার্মান ব্র্যান্ড হিরশম্যানের। কোম্পানির ওয়েবসাইটে ইথারনেট সুইচের দাম ছিল ৪৮৮১ দশমিক ৮৩ ডলার। যদিও পণ্য চালানটি আমদানি করা হয়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ২১৮ ডলার বা ২ কোটি ৩ লাখ টাকায়। যা আমদানি মূল্যের তুলনায় ৪২ গুণ বা ৪২০০ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান বলেন, সম্প্রতি পিডিবি এবং সিপিজিসিবিএলের কাছ থেকে আটক চালান সম্পর্কে জবাব পেয়েছি। চিঠিতে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, আমদানিকৃত পণ্যের দাম বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা উল্লেখ করেছে যে বাল্ক আমদানির কারণে কিছু পণ্যের দামের তারতম্য থাকা সাধারণ ব্যাপার। যদি অতিরিক্ত দামের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ চালান আটকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশেষ আদেশে পাইপ কাটার, হাতুড়ি এবং স্ক্রু ড্রাইভারের মতো হ্যান্ড টুলস সংগ্রহের দাবি হাস্যকর। এটি সম্ভবত বড় আকারের দুর্নীতির উদাহরণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এটিকে ‘পুকুর চুরি’ না বলে ‘সাগর চুরি’ বলতে হবে। তথ্যসূত্র : ডেইলি স্টার
মন্তব্য করুন