ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক লেনদেন নিজস্ব মুদ্রায় করার লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে সই করেছে। এই চুক্তির ফলে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক লেনদেন হবে রুপি ও দিরহামে।
শনিবার (১৫ জুলাই) আবুধাবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের উপস্থিতিতে এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক খালেদ মোহাম্মদ বালামা সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই)-এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে দুটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজ নিজ মুদ্রার ব্যবহার ও অনলাইনে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা হবে।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। চুক্তি অনুসারে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে রুপি এবং দিরহামের ব্যবহার ও অনলাইনে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও আরব আমিরাতের সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে দুটি দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজ হবে।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে তাৎক্ষণিক অর্থ পরিশোধের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিষয়েও উভয় দেশ একমত হয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এভাবে সরাসরি লেনদেন করার প্রবণতা বাড়ছে। যার ফলে বিল পরিশোধের ব্যয়ও কমে আসছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সেই সঙ্গে দেশটিতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় কাজ করেন। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। সেই মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। তার জেরে বেড়ে যায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার।
সেই সঙ্গে বাড়ে জ্বালানি তেলের দাম। ফলে আমদানিকারী দেশগুলোর আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়ে যায়। বৃদ্ধি পায় মূল্যস্ফীতি; তৈরি হয় ডলার–সংকট। এ বাস্তবতায় বিশ্বের অনেক দেশ এখন ডলারকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন মুদ্রায় লেনদেন করার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ ছাড়া আরও যেসব দেশের সঙ্গে ভারত এখন রুপিতে লেনদেন করছে, তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বাহরাইন, কিউবা, মিসর, ইরান, ইরাক, কুয়েত, ওমান, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, উজবেকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কা।
সূত্র: খালিজ টাইমস।
মন্তব্য করুন