কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে ঝাড়ু। কেউ আবার রং তুলি দিয়ে রঙিন করছেন দেয়াল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আত্মগোপনে চলে যায় পুলিশও। এরপরই সারা দেশের মতো বন্দর নগরীতেও কিছুটা বেড়েছে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা ফেরাতে গেল কদিন দিনরাত মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
লাঠি হাতে বিশৃঙ্খল নগরে ট্রাফিকের শৃঙ্খলা সামলাচ্ছেন তারা। ঝাড়ু হাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন শহরের ময়লা। লুটপাট ঠেকাতে করা হচ্ছে মাইকিং। পুলিশের গুলিতে ছাত্রের শরীরের রক্তিম দেওয়াল নানা আল্পনায় ফুটিয়ে তুলছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) সকালে নগরের কাজীর দেউরী মোড়ে দেখা যায় ২০-৩০ জন ছাত্রছাত্রীকে। যারা সামলাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব। তাদেরই একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র সোহাগ আহমেদ। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে আমরা সড়কে কাজ করছি। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ কেউ হেলমেট না পরলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শুধু কাজীর দেউরী নয়, নগরের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ছাত্ররা। তাদের এমন ব্যবস্থাপনায় খুশি সাধারণ মানুষ ও চালকরা। চালকরা বলছেন, এই কয়েকদিন অনেক শান্তিতে আছি। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। পুলিশকেও চাঁদা দিতে হচ্ছে না।
নগরের কালুরঘাট ব্রিজ এলাকায় দুপুরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এম আবুল ফয়েজ মামুন নামে একজন সমন্বয়ক বলেন, শুধু কালুরঘাট ব্রিজ নয়, নগরের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে, অলিতে গলিতে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে।
নগরের জিইসি মোড় থেকে খুলশী-১ এলাকা পর্যন্ত বিকেলে দেখা গেছে, রংতুলির নানা ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ বিভিন্ন কিছু ফুটিয়ে তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এতে কাজ করছেন কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্র। শুধু জিইসি মোড় নয়, নগরের বেশিরভাগ স্থানে আঁকা হচ্ছে এমন আল্পনা। এসময় হাবিবুর রহমান, সানজিদা সানজু, সাকিব, হাবিব, মারুফ, সাগর, আজিজ, ইসরাত, হালিমা, তানভীর উপস্থিত ছিলেন।
সানজিদা রহমান সানজু কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই নগরের জিইসি মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রাফিতি করছি। এই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কী কী ঘটেছে সেগুলো তুলে আনা হয়েছে আল্পনায়। পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন স্লোগানও শোভা পেয়েছে সেখানে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, প্রতিটি এলাকায় এলাকায় ছাত্রছাত্রীরা কাজ করছেন। ছাত্ররা চাইলেই যে অনেক কিছু সম্ভব তা আবারও প্রমাণ হলো।