চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা নদীর চরের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠজুড়ে চাষ হয়েছে বড় আকৃতির জাপানি মুলার। বিশাল আকৃতির এ মুলা খেতে যেমন চমৎকার তেমনি খেতেও অন্যরকম স্বাদ। উপজেলার বারৈয়ারহাটের পশ্চিম পাশে নাছির মোহাম্মদ ঘাটে হালদা নদীর দুপাশের বিস্তীর্ণ চরে মুলার চাষাবাদ হয়েছে।
কৃষি বিজ্ঞানী ও চাষির মতে, দেশের সবচেয়ে বড় মুলা উৎপাদিত হয় ফটিকছড়িতে। ফটিকছড়ির ১০ মাঘ মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ওরশ উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় বিক্রি হচ্ছে এসব বিশাল আকৃতির জাপানি মুলা। তবে, ইদানীং ভান্ডারী মুলা হিসেবে দেশজুড়ে খ্যাতি ছড়াচ্ছে এ জাপানি মুলা।
হালদা নদীর কূল ঘেঁষেই বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে মুলা চাষ হয়েছে। একেকটি মুলার ওজন ৪-১৫ কেজি এবং এসব মুলার মূল্য ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ওরশে বিশাল আকৃতির যে মুলা বিক্রি হয় তার বেশিরভাগ ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার পূর্ব সুয়াবিল নাছির মোহাম্মদ ঘাট এলাকার মুলা। এবার ওরশে অন্তত ২০ লাখ টাকার মুলা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এ এলাকার কৃষকদের। এছাড়া এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মুলা বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৬ কেজি ওজনের।
তাই ১০ মাঘের ওরশ শরীফের অন্যতম আকর্ষণ ভান্ডারী মুলা। এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত বড় আকারের মুলা মেলায় বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায় কৃষকরা। এ বছর নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে শুরু করে মাইজভান্ডার শরীফ মেলা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মুলা বিক্রি চোখে পড়ে। এক একটি মুলা দুই তিন হাত পর্যন্ত লম্বা ও পাঁচ থেকে ১৬ কেজি ওজনের পর্যন্ত হয়।
মুলা চাষি ফজল করিম কালবেলাকে বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে মাইজভান্ডারের ১০ মাঘের ওরশ উপলক্ষে মুলা চাষ করছি। এক লাখ টাকার মতো খরচ করে মুলা চাষ করেছি। ৯০ দিনের মধ্যে ফলনও হয়েছে ভালো। এবার তার লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ টাকারও বেশি। এরইমধ্যে দেড় লাখ টাকার মুলা ক্ষেত থেকেই বিক্রি করেছেন ফজল করিম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাছানুজ্জামান বলেন, জাপানি হাউব্রিড জাতের এ মুলা পাহাড়ি ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং ফলনও হয় ভালো। উপজেলার প্রায় এক হাজার কৃষক মোট ৯৫ হেক্টর জমিতে এবার মুলা চাষ করেছেন। গত বছর প্রতি হেক্টরে ১৭ টন মুলা উৎপাদিত হয়েছে, যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার অধিক। এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিবিদ মো. গোলাম আজম জানান, মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলি, বৃহদন্ত, কিডনি ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলিরুবিন কমিয়ে তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে, যা কিনা জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। মুলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং কম ক্যালরিযুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মন্তব্য করুন