চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর ইউনিয়ন দিয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেষে ছিলো হাহাকার। বর্ষা এলেই স্রোতের তোড়ে নদীতে বিলীন হতো ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। তখন কান্নায় ভারী হতো নদীপারের অসহায় মানুষের আহাজারিতে। বাসিন্দাদের রক্ষার্থে রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি'র বিশেষ উদ্যোগে সেই কর্ণফুলীর তীরে পরিকল্পীতভাবে মাঝ নদী থেকে ড্রেজিং করে এনে বালি ফেলা হয়েছে।
এতে কুলঝুড়ে সৃষ্ট হয়েছে ৫০ হেক্টর আয়তনের বিশাল বালিচর। ফলে বিদায় নিয়েছে ভাঙন, বন্ধ হয়েছে বাসিন্দাদের হাহাকার। কর্ণফুলীর তীরঘেষে সৃষ্ট সেই ধু-ধু বালুচরে এখন সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। গেল মৌসুম থেকে সোনালী এই বালুচরে বাদাম, ফেলন, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, তরমুজসহ নানা ফসলের ঢেউ তুলেছেন তারা।
চাষীরা জানান, তপ্ত বালুচরে সবুজের সমারোহ তৈরি করেছেন তারা। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস তাদের সার্বিক সহায়তা করছেন। সবজির পর এবার তারা বিস্তৃর্ণ এই চরে আউশধান চাষবাদ শুরু করছেন বলে জানান।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়ন দিয়ে নদী পাড়জুড়ে ছিলো কূল ভাঙনের হাহাকার। এরথেকে স্থানীয়দের রক্ষা করতে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের বালিগুলো পাড়ে এনে ফেলা হয়েছিলো। এতে নদীর পাড়জুড়ে দীর্ঘ ৫০ হেক্টরের অধিক বিস্তৃত কৃত্রিম চরের সৃষ্টি হয়। চরটি প্রথমদিকে অনাবাদি পড়ে ছিলো। তবে এটিকে আবাদের আওতায় আনতে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হয়৷ গত রবি মৌসুমে কৃষি অফিসের পরামর্শে চরটির প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে বাদাম, ফেলন, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, তরমুজ সহ বিভিন্নরকমের রবি ফসল চাষ করেছিলো কৃষকরা। এবার তাদেরকে দিয়ে ওই চরে আউশ ধানের আবাদ করাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এই চরটিতে আউশ ধানের আবাদ করানোর লক্ষ্যে ২৫ জন কৃষকের মাঝে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। প্রতি জনকে ৫ কেজি করে আউশ বীজ ধান, ১০ কেজি করে ডিএপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রণোদনা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বিস্তৃত চরে আউশ ধানের আবাদে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক। এই চরের এক হেক্টর জমিতে বোনা আউশ ধানের চাষ করেছেন কৃষক মো. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি জানান, তিনি বোরো ধান ঘরে তুলেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে কর্ণফুলীর চরে পুরোদমে বোনা আউশ আবাদে নেমে পড়ছেন। এখন পর্যন্ত এক হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। অন্যান্য জমিতে বোরোধান কর্তন শেষ হলে আরো ২-৩ হেক্টর জমিতে আউশ ধান বুনবেন বলে জানান তিনি।
অন্যান্য কৃষকরা জানান, তাদের ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমারের পরামর্শে এই প্রথম বারের মত আউশ আবাদ করতে যাচ্ছেন। যদি তারা এবার লাভবান হন তবে আগামী বছর থেকে পুরো চরেই আউশ আবাদ করবেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ইতিপূর্বে চরটির ৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষাবাদ করিয়েছিলাম। এবার ২৫ জন কৃষককে আউশ আবাদের জন্য প্রণোদনা বীজ ও সার দেয়া হয়েছিলো। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সার্বিক সহায়তা দিয়ে আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আশাকরি সবজির ন্যায় আউশেও ভালো ফলন পাবেন কৃষকরা। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।
মন্তব্য করুন