

সরকার সম্প্রতি দেশে তৈরি হওয়া ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনারের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাতিল করেছে। অন্যদিকে, এই যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের আমদানি এখন উচ্চ শুল্কে পড়েছে। এতে দেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্প গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
শিল্প খাতে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে আমদানিই উৎপাদনের চেয়ে লাভজনক হয়ে উঠছে। ফলে স্থানীয় শিল্পায়ন থেমে যাচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষ কাজ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এই নীতির কারণে ইলেকট্রনিক্স খাতে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকল্প হিসেবে আমদানিনির্ভর সংযোজন শিল্পের বিকাশ সহজ হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে এসআরও নং-২৭৪-আইন/২০২৫/৩১৭-মূসক জারি করে। এতে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ারকন্ডিশনারের জন্য ব্যবহৃত অনেক উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এসব যন্ত্রাংশের উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি এখন ১৫-৪৫ শতাংশ শুল্কের মধ্যে পড়ছে।
শিল্পকর্মীরা জানাচ্ছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং লক্ষাধিক কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়ছে। উৎপাদনকারীদের মতে, উৎপাদনের পরিবর্তে আমদানিই বেশি লাভজনক হওয়ায় নতুন বিনিয়োগও আসছে না।
এসআরও অনুযায়ী, দেশে ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনারে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রাংশের আমদানিতে শুল্ক বাতিল করা হয়েছে। যেমন— ফ্রিজ শেলফ, স্টপার ব্লক, ডিওডোরেন্ট ব্লক, ক্রিস্পার কভার, ফ্যান ব্লোয়ার, এক্সিয়াল ফ্যান, এয়ার ফিল্টার এবং অন্যান্য উপকরণ।
তবে, স্থানীয় উৎপাদনকারীরা এই যন্ত্রাংশ তৈরি করলেও কাঁচামাল আমদানিতে বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে এবং আমদানি করা যন্ত্রাংশের তুলনায় লাভ কম। এ অবস্থায় শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদন কমিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই নীতির ফলে দেশে সেমি-ফিনিশড গুডস (SFG) ও প্লাস্টিক শিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রায় ৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্লাস্টিক শিল্পের প্রায় ১৫ লাখ কর্মীও সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে।
দেশীয় ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনার শিল্পের নেতারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর আমদানিতে শুল্ক বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। তারা বলেন, স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান রক্ষার জন্য শুল্ক পুনঃপ্রবর্তন এবং কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এভাবে চললে ইলেকট্রনিক্স খাতের টেকসই বিকাশ ব্যাহত হবে, রপ্তানি সম্ভাবনা সংকুচিত হবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মন্তব্য করুন