লক্ষ্মীপুরে কাগজপত্রবিহীন ও বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় জব্দ হওয়া হাজারো মোটরযান খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এসব মোটরযানের যন্ত্রপাতি অনেকাংশেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এসব সম্পদ। আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
তবে এর জন্য স্থানীয় লোকজন থেকে শুরু করে আইনজীবীরাও পুলিশের গাফিলতি ও আইনের জটিলতাকে দুষছেন। তাদের মতে, আইনি জটিলতা নিরসনের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে দেশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে।
আরও পড়ুন : ভোটের আগে বিলাসী গাড়ির আবদার
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কাগজপত্রবিহীন ও নানা অপরাধের ঘটনায় মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন প্রকারের গাড়ি জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো লক্ষ্মীপুরে পুলিশ লাইনস, বিভিন্ন থানা, আদালতপাড়া ও বিআরটিএ অফিসের সামনে ফেলে রাখা হয়। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই খোলা আকাশের নিচে অযত্নে অবহেলায় যানবাহনগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়। সরকারি মালখানায় অযত্নে পড়ে থাকা এসব গাড়ির কাঠামো বা চ্যাসিস ছাড়া অবশিষ্ট তেমন কিছুই নেই। বৃষ্টিতে ভিজে, রোধে পুড়ে এবং ধুলাবালিতে ইঞ্জিন, চাকা ও গাড়ির অবকাঠামো অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো আবার মাটির সংস্পর্শ থেকে পচেও যাচ্ছে। আইনি জটিলতার কারণে অনেক মালিকই এগুলো যথাসময়ে ছাড়িয়ে নিতে পারেন না। ফলে একসময় এগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, জব্দ যানবাহনগুলো দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিকদের নিকট হস্তান্তর কিংবা নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হলে এগুলো ব্যবহারের মধ্যেই থাকত। এতে রক্ষা পেত দেশের সম্পদ। সরকারও রাজস্ব পেত। তাদের মতে, জব্দ যানবাহনগুলোর সংরক্ষণের জন্য আরও ভালো উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী হারুনুর রশিদ ব্যাপারী ও মোসাদ্দেক হেসেন বাবর বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন সময় জব্দকৃত গাড়িগুলো অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে। এতে পুলিশেরও গাফিলতি আছে। যেসব যানবাহনগুলো কোনো মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, ওইসব মামলায় যথাসময়ে চার্জশিট দেওয়া হয় না। তাই আইনি জটিলতায় পড়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা ওইসব যানবাহন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন : জনপ্রশাসনের ৭০ বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাব নাকচ
এ ছাড়া কাগজপত্রবিহীন জব্দকৃত গাড়িগুলোও নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয় না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিলামের উদ্যোগ নিলে অন্যরা ব্যবহার করতে পারত। এগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে বিনষ্ট হতো না। এ জন্য আইন সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে। এতে দেশের সম্পদ বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, আইনি জটিলতায় পড়ে থেকে জব্দকৃত গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া যদি আরও সহজ হতো তাহলে জব্দকৃত এসব আলামত প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করা যেত কিংবা নিলামে দেওয়া যেত।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে অবৈধ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি জব্দ করে আমরা আদালতে আইন অনুযায়ী রিপোর্ট প্রদান করি। গাড়ির মালিকানা যাচাইপূর্বক আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিষ্পত্তি করি। আদালতের নির্দেশনা পেলে আমরা গাড়িগুলো নিলামেও দিতে পারি। আদালত যত দ্রুত এসব বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দেবেন, তত দ্রুত আমরা সমাধান করতে পারব। তারপরও আমরা চেষ্টা করি রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করতে।
লক্ষ্মীপুরে সব মিলিয়ে জব্দ করা এক হাজারেরও বেশি মোটরযান পরিত্যক্ত পড়ে আছে।
মন্তব্য করুন