বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা একদফা দাবি কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা। তিনজন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের আট নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় বেশ কিছু গাড়ি, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাও ভাঙচুর করেন তারা।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল ৪টায় পৌর সদরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় ভাঙচুর এবং আগুন দেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৩টায় একদফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিজয় চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিজয় চত্বরে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। বিকেল ৩টার কিছু পরে আওয়ামী লীগের লোকজন করতোয়া সেতুর পূর্ব পাড়ে আন্দোলনকারীদের দেবীগঞ্জে প্রবেশে বাধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। সেখানে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা আন্দোলনকারীরা একসঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিজয় চত্বরের দিকে অগ্রসর হলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী বিজয় চত্বর থেকে পিছু হটে।
পরে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবু বকর সিদ্দিক আবু এবং উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম এমুর বাসায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা একে একে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আ স ম নুরুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জের বাসায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রহমান সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপঙ্কর রায় মিঠু ও ছাত্রলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার স্বদেশ চন্দ্র রায়ের বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা।
এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা বেশ কিছু মোটরসাইকেল, একটি ট্রাক্টর এবং একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, উপজেলা আনসার অফিস, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়, ফ্রেন্ডস ক্লাবের কার্যালয়, বিজয় চত্বরের বিভিন্ন সরঞ্জাম, চৌরাস্তার ট্রাফিক বক্স, নেহা হোটেল ও একটি কম্পিউটারের দোকানে ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলগুলোতে পুলিশ কিংবা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। এদিকে সহিংসতার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জড়িত নন বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত একাধিক শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, তারা দেবীগঞ্জে কর্মসূচি পালন করতে যাওয়ার আগেই এসব ঘটনা ঘটে।
বিএনপি-জামায়াত একজোট হয়ে এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও উভয় দলের কারও সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার ওসি সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন