সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

‘পলিথিনে ভরে ছেলের নিথর দেহ বাড়ি নিয়ে আসি’

আন্দোলনে নিহত মেহেদী। পুরোনো ছবি
আন্দোলনে নিহত মেহেদী। পুরোনো ছবি

নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে মো. মেহেদী। বাবা স্থানীয় একটি কারখানার তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। মেহেদীকে ঘিরেই সব স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। ছেলেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন সেই আশায় পরিবারের অসচ্ছলতার মধ্যেও স্থানীয় একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। অসহায় বাবা-মার স্বপ্ন ছিল, এক সময় ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মার নাম উজ্জ্বল করবে। তবে সেই স্বপ্ন গুলিতে শেষ হয়ে গেছে।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা-মা। ছেলের কথা মনে পড়লেই বুকফাটা চাপা কান্না এবং চোখের পানিতে কাতর হয়ে পড়েন বাবা-মা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মো. মেহেদী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ঝাউচর গ্রামের মো. ছানাউল্লাহর ছেলে। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার বড়-রায়পাড়া। তবে তিনি তার পরিবারসহ জন্মের পর থেকে নানির বাড়িতেই থাকতেন।

নিহত মো. মেহেদীর বাবা ছানাউল্লাহ বলেন, আমার ছেলে খুবই মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিল। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে নিজেই সারাদিন টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ আর সংসারের খরচ চালাত। আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। ২০ জুলাই সন্ধ্যার পরও সে বাড়ি না আসায় আমি তার মোবাইলে ফোন দিই। কয়েকবার রিং হওয়ার পর এক ছেলে ধরে জানায়, আমাদের মেহেদী আর নেই। নারায়ণগঞ্জের চিটাগাংরোডে পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি রাস্তায় পড়ে আছে আমার একমাত্র ছেলের নিথর দেহ। মাথায় গুলি লাগায় মজগগুলো সব বের হয়ে গেছে। পলিথিনে ভরে ছেলের নিথর দেহটিকে অনেক কষ্টে বাসায় নিয়ে আসি।

এদিকে মেহেদীর মায়ের কান্না এখনো থামছে না। ছেলের কথা মনে করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে তিনি।

মেহেদীর মা শিল্পী বেগম ছেলের কলেজের আইডি কার্ড হাতে নিয়ে কান্নাকণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী একটি ছোট চাকরি করেন। অনেক স্বপ্ন ছিল, একমাত্র ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার ছেলেটা দেশের জন্য আন্দোলন করতে গিয়েছিল আমাদের না জানিয়ে। সবার সঙ্গে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমার বাবার মাথার মগজগুলো বের হয়ে গেছে। কেন মারল এমন করে আমার ছেলেকে? কী দোষ করেছিল।

নিহত মেহেদীর স্কুলশিক্ষক আবুল কাশেম জানান, ছোটবেলা থেকেই সে খুব শান্ত ও ভদ্র এবং মেধাবী একজন ছেলে ছিল। সে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। অসহায় পরিবারটির একমাত্র ছেলে হয়েও সে পরিবারের চিন্তা না করে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচারের দাবি ও এ অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তামাকবিরোধী ইয়ুথ মার্চ  / তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিল, দ্রুত আইন পাসের আহ্বান

দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সিট পেয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে : ফজলুর রহমান

নেতাকর্মীদের ধৈর্যশীল আচরণের আহ্বান আমিনুল হকের 

বাংলাদেশ হবে বসবাস ও বিনিয়োগের স্বর্গ: আব্দুল মুক্তাদির

ঢাকায় অ্যাপোলো ক্লিনিকের যাত্রা শুরু

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামকে দেখতে হাসপাতালে ডা. রফিক

একাত্তরের ইস্যুর সমাধান চাইল এনসিপি

রাজধানীতে তামাকের বিরুদ্ধে ‘ইয়ুথ মার্চ’

বুড়িগঙ্গা নদী থেকে নারী-শিশুসহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার

ত্রিবার্ষিক সম্মেলন / আবারো জামালপুর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে শামীম-মামুন

১০

দাবি আদায় ছাড়া ঘরে না ফেরার ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীর

১১

লিডসের বিরুদ্ধে আর্সেনালের গোল উৎসব

১২

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত: জোনায়েদ সাকি

১৩

এনসিপির কর্মকাণ্ডে ফিরছেন সারোয়ার তুষার

১৪

যৌথ বাহিনীর অভিযানে পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার 

১৫

সাংবাদিকের বাড়িতে চুরি, স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার ক্ষতি

১৬

৪৫ বছর ভাত না খেয়েও সুস্থ ও সবল বিপ্লব

১৭

চেতনানাশক খাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতি

১৮

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

১৯

প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে ছাত্রদলের নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

২০
X