নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী (১৭) হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক ও সহযোগী মো. জামশেদকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ত্বকী হত্যা মামলায় গত তিন দিনে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা। ত্বকী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ১১ বছর আগে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আজমেরী ওসমানের নাম এলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আজমেরী ওসমান প্রকাশ্যে তার সহযোগীদের নিয়ে এত দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, জামশেদ আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক। দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসেছে, ত্বকীকে অপহরণ এবং হত্যার পর তার মরদেহ যে গাড়িতে করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন জামশেদ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে শাফায়েত হোসেন ওরফে শিপন এবং রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে কাজল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর শহরের কালীর বাজার এলাকা থেকে মামুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই তিন আসামির ছয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারা র্যাব হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন।
এর আগে ত্বকী হত্যার ঘটনায় আজমেরী ওসমানের সহযোগী ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েব উদ্দিন ওরফে জ্যাকি, রিফাত হোসেন ও সীমান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ইউসুফ হোসেন ও সুলতান শওকত আদালতে অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই পাঁচ আসামি আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। শিগগিরই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন বলে তখন জানিয়েছিল। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দ্রুত দাখিল এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ধারাবাহিকভাবে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
মন্তব্য করুন