গত ২২ জুলাই ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দায় বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। যেখানে দুর্ঘটনার তিনটি কারণ শনাক্তের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে কমিটি।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মামুন শিবলী।
তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য প্রথমত বাসটির চালকের খামখেয়ালিপনা, দ্বিতীয়ত চালকের অপেশাদারি আচরণ এবং তৃতীয়ত বিধি ভেঙে সড়কের পাশে বড় পুকুর খনন করা হয়েছিল।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসচালক মোহন খানের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল হালকা গাড়ি চালানোর। কিন্তু তিনি বাসের মতো একটি ভারি যানবাহন চালাচ্ছিলেন দীর্ঘদন ধরেই। তবে বাসার স্মৃতির ফিটনেস ছিল।
তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে, সড়কের পাশের বড় ও গভীর পুকুরটি মৃত্যুকূপ হিসেবে রূপ নিয়েছে। ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর বা মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা সড়কটি অত্যন্ত পুরাতন।
এ সড়ক প্রশস্ত না করায় জমির মালিকরা সেখানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। সড়কটির দুই পাশে যদি মহাসড়কের মতোই ১০ থেকে ১২ ফুট জমি অধিগ্রহণ করা থাকত, তাহলে দুর্ঘটনা ঘটলেও এত প্রাণহানি হতো না।
শিবলী মামুন আরও বলেন, বাসের মালিকপক্ষের উচিত কার হাতে গাড়ি দিচ্ছেন তার যথাযথ মনিটরিং করা। তদন্তকারী আরও দুটি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রকৃতপক্ষে চালক মোহন খানের খামখেয়ালিপনায় দুর্ঘটনা ও ১৭ জনের প্রাণহানি হয়।
আরও পড়ুন : ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনা হওয়ার আগমুহূর্তে বাসের চালক তার সিটে বসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা নিয়ে তর্ক করছিলেন আর মোবাইল চালাচ্ছিলেন বলেও তদন্তে উঠে আসে। এ ছাড়া বাস মালিক সমিতি ও মালিকপক্ষ আয় বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, পরিবহন চলাচলে নির্দেশনা মেনে চলতে গড়িমসির কথা উঠে এসেছে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, প্রতিবেদন পেয়েছি, সুপারিশ অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রতিবেদন সম্পর্কে বাস মালিক ও শ্রমিকদের জানানো হবে।
এদিকে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মামলায় ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামি করা হয়। ইতোমধ্যে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বাসটির চালক মোহন এবং সুপারভাইজার ফয়সাল ওরফে মিজান জেলহাজতে রয়েছেন। তবে সুপারভাইজার ফয়সালকে নির্দোষ দাবি করছে তার পরিবার।
সুপারভাইজার ফয়সালের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় ফয়সাল বাসের ছাদে ছিল, সামনের স্টপেজে একটি কার্টুন নামাতে সে ছাদে উঠেছিল। ভেতরে থাকলে আজ এ দুর্ঘটনায় আমার ছেলেটিও মারা যেত। ওর বয়স ১৮ বছরের কম। আমি এ মামলা থেকে আমার ছেলের অব্যাহতি চাই।’
মন্তব্য করুন