কক্সবাজারে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে আবারও নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কিছুটা ভাঙন কমলেও মেরিন ড্রাইভ সড়কটি শুক্রবার একেবারে ধষে পড়ে। রোডটি এখন গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে যাচ্ছে ঝাউগাছ, তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ, তছনছ হচ্ছে বালিয়াড়ির রাস্তা।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেকনাফ বিচ পয়েন্ট থেকে সাবরাং খুরেরমুখ ও মুন্ডার ডেইল পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫টি স্থানে সড়ক ও পাশের ঝাউবাগানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে সড়কের একটি স্থানে ১৫০-২০০ গজের মতো সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে। এ সময় শ’খানেক ঝাউগাছও উপড়ে পড়তে দেখা গেছে। ভাঙন দেখতে আশপাশের লোকজন মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভিড় করেন।
আরও পড়ুন : কেএনএফকে মুখোমুখি সংলাপের প্রস্তাব
এই ভাঙ্গনের ফলে টেকনাফের সাবরাং এলাকার দুই থেকে আড়াই হাজার পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল, বাতাসের গতিবেগও বেশি। কিন্তু বৃষ্টি নেই। আর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। একের পর এক ভয়াবহ ঢেউ আঘাত করছে উপকূলে। ঢেউয়ের আঘাতে তলিয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ, তছনছ হচ্ছে বালিয়াড়ির রাস্তা, উপড়ে যাচ্ছে ঝাউগাছ।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, অনেকে এখানে জমি কিনেছেন। তাদের কেনা জমি ভরাট করতে সড়কের পাশের সমুদ্রসৈকত থেকে অবাধে বালু তুলছেন। এতে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ছাড়া সড়ক রক্ষায় স্থাপন করা জিওব্যাগগুলোও ফেটে যেতে শুরু করায় ঝুঁকি বেড়েছে। তবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি বিশেষ ইউনিট ভাঙন রোধে কাজ করছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি। মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি স্পট খোরের মুখ, মুন্ডার ডেইল ও হাদুছ ছড়া গতকালের চেয়ে আজকে ব্যাপক ভাঙন ধরেছে। তবে ভাঙন রোধে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করছে। খুব কম সময়ে এই সমস্যা সমাধান হবে।
সাবরাং ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ বলেন, সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে মেরিন ড্রাইভের বেশ কয়েকটি স্পটে ব্যাপক ভাঙন ধরেছে। গতকালের তুলনায় আজকের ভাঙন ব্যাপক। ইতোমধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ শুরু হলেও ১৯৯৪ সালে প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকল্পটি পুনরায় সেনাবাহিনীর ইসিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরই নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হয় প্রকল্পটির নির্মাণকাজ।
তিন ধাপে এ সড়কটির প্রথম পর্যায়ে কলাতলী থেকে ইনানি পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইনানি থেকে শিলখালী পর্যন্ত আরও ২৪ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয় ২০১৬ সালের জুন মাসে। তৃতীয় পর্যায়ে শিলখালী থেকে টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয় ওই বছরের এপ্রিল মাসে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া নির্মাণকাজের কার্যাদেশের শেষ সময় ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে কাজ শেষ হয়।
মন্তব্য করুন