হাসান মাহমুদ, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষক’ আরজ আলীর

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বপক্ষের কাগজপত্র হাতে আরজ আলী বয়াতির সন্তানরা। ছবি : কালবেলা
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বপক্ষের কাগজপত্র হাতে আরজ আলী বয়াতির সন্তানরা। ছবি : কালবেলা

ছুটিতে বাড়ি এসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকার টানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত অধুনা গ্রামের মৃত এয়াছিন বয়াতির ছেলে আরজ আলী বয়াতি। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থাকায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের শিখিয়েছিলেন যুদ্ধের কলাকৌশল। ছিলেন সম্মুখ সারির এক বীরযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আরজ আলীর সহযোদ্ধারা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি স্বীকৃতি।

১৯৭৩ ও ২০০০ সালে আরজ আলীর স্ত্রী লালমোন নেছার নামে পাঠানো অনুদানের চিঠি। ছবি : কালবেলা

আরজ আলী বয়াতির দিনমজুর ছেলে নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা আরজ আলী বয়াতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সময় ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন আমার বাবা আরজ আলী। সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বারবার বলা হলেও তিনি (আরজ আলী) পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান না করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেশ রক্ষায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাটাজোর এলাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন আমার বাবা আরজ আলী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এক হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন আমাদের পরিাবারকে। এমনকি ২০০০ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তার কার্যালয় থেকেও প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একান্ত সহকারী সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম স্বাক্ষরিত একটি অনুদানের চেক আমার মা লালমোহন নেছার নামে পাঠানো হয়। পরিবারের পক্ষে আমার মা চেকের টাকা উত্তোলন করেন।

আরও পড়ুন : ৫২ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী

তিনি আরও বলেন, মা জীবিত থাকাকালীন আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতার নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। ২০১০ সালে আমার মা মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কাগজপত্র মায়ের কাছে গচ্ছিত ছিল। যা এতদিন খুঁজে পাইনি। এজন্য গেজেটভুক্তের আবেদনও করতে পারিনি। সম্প্রতি কয়েকটি কাগজ আমার চাচার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরজ আলী বয়াতির নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য তিনি (নজরুল) বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডার আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরও পড়ুন : ময়মনসিংহে মুক্তিযোদ্ধা মতিন হত্যায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

বাটাজোর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাদেরসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আরজ আলী আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তার সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ থাকায় যুদ্ধে আমাদের গাইড করতেন। বাটাজোর স্কুলের পাশে পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধা আরজ আলী শহীদ হয়েছিলেন। আমরা এতদিন জানতাম আরজ আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত আছে। কিন্তু এখন তার সন্তানরা এসে বলে আমার বাবার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আরজ আলীর নাম গেজেটভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানাই।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করলে কাগজপত্র যাচাইবাছাই করে সত্যতা পেলে গেজেটভুক্তের জন্য সুপারিশ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদিগামী যাত্রীদের জন্য সুখবর

এমবাপ্পের একমাত্র গোলে রিয়ালের কষ্টার্জিত জয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

১০

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

১১

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১২

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১৩

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১৪

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৫

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৬

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৭

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৮

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৯

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

২০
X