ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঠাকুরগাঁও বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব

শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার ধুম। ছবি : কালবেলা
শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার ধুম। ছবি : কালবেলা

ঠাকুরগাঁওয়ের শুক নদীর তীরে বুড়ির বাঁধ এলাকায় মাছ ধরার ধুম পড়েছে। খেওয়া জাল, পলো আর মাছ রাখার পাত্র খলই নিয়ে ভোর থেকেই এই এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার পরই মাছ ধরতে নেমে যান শত শত মানুষ। কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় চলছে মাছ ধরার এক প্রতিযোগিতা। আর বাঁধে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা।

তবে মাছ ধরতে আসা সবাই অভিযোগ করে বলেন, মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। রাত থেকে জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না কেউ। দেশীয় প্রজাতির মাছ এক প্রকার বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক বছর আগেও এই বাঁধে প্রচুর দেশীয় মাছ ধরা পড়ত, কিন্তু এখন মাছ নেই। কারেন্ট জাল, রিং জালের কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে মনে করেন মাছ ধরতে আসা সবাই।

অপরদিকে শহর থেকে দেশীয় মাছ ক্রয় করতে যাওয়া ক্রেতারা অভিযোগ করেন মাছের দাম অনেক বেশি। দেশীয় মাছ তো পাওয়া যায় না, এখানে যাও পাওয়া যাচ্ছে দাম অনেক। পুঁটি মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতাই মাছ ক্রয় করতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত এ বাঁধটি। সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে বাঁধের গেট ছাড়ার পর সন্ধ্যা সাতটা থেকে মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারাদিন ধরে মাছ ধরার জন্য আশপাশের কয়েক গ্রামের ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যেন ভেঙে পড়েছে নদীর তীরে। কেবল পুরুষরাই নয়, নারী-শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। কারও হাতে খেওয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকেই কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।

এই উৎসবে আবার কেবল মাছ ধরতেই সবাই ব্যস্ত নেই, কেউ কেউ ব্যস্ত হয়েছেন অন্য কাজেও। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে খাবারের হোটেল, ফলের দোকান, খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। বাইরে থেকে আসা মানুষের মোটরসাইকেল ও সাইকেল রাখার জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী গ্যারেজও।

জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতি বছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।

ঠাকুরগাঁও শহরের জলিল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, প্রতিবারে আমি এখানে মাছ ধরতে আসি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে অনেক মানুষ আসেন মাছ ধরতে। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে। এটা আজকের দিনে একটা মেলায় পরিণত হয়েছে। তবে গত দুই বছর থেকে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও এখন দেশীয় মাছের হাহাকার।

মাছ ধরতে আসা জেলেরা বলেন, জলকপাট আগামী কয়েক দিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এই কয়েক দিন। তবে প্রথম দিনেই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত ২/৩ বছর থেকে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই। তাই শখের বসে আমরা মাছ ধরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

মাছ ধরতে আসা স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আসাদুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আমি ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবারে শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে নয়টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুঁটি, টেংরাসহ অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। এতক্ষণ থেকে যেভাবে খাটনি হয়েছে সেই অনুপাতে মাছ পাওয়া যায়নি।

শহর থেকে মাছ ক্রয় করতে যাওয়া পারভেজ হোসেন বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ বাসায় পছন্দ করে। তাই টাটকা মাছ ক্রয় করার জন্য এখানে সকালেই চলে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি মাছ তেমন নেই। আর যা অল্প মাছ উঠেছে তাও আবার দাম অনেক বেশি। দেখি অল্প কিছু মাছ নিয়ে চলে যেতে হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া কালবেলাকে বলেন, ১৯৫১-৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধটির সামনে একটি অভয়াশ্রম আছে। প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পর এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। যারা এখানে মাছ ধরতে আসেন। আমরা মনে করছি এটার মাধ্যমে আমিষের যে চাহিদা সেটি পূরণ হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকসু ভবনকে ‘ভাতের হোটেল’ ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের

৭ দিন ধরে খোঁজ মিলছে না এসএসসি ফলপ্রার্থী রিয়ামনির

আট মামলার আসামিকে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

রাসিকের ৮০৬ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন

চাল না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে : আব্দুল হালিম

গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

১০

শাহজালাল বিমানবন্দরে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ৬ নির্দেশনা

১১

খালসহ ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করলেন খুলনার জেলা প্রশাসক

১২

৩০ আগস্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন

১৩

জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন

১৪

বছর ঘুরে ফিরল সেই জুলাই 

১৫

৩৬ জুলাই বিপ্লব ও নির্মম নির্যাতনের মধ্যেও বেঁচে ফেরার গল্প

১৬

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ / এস আলম পরিবারের তিন সদস্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

১৭

খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষের অভিযোগ

১৮

রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল’ দিবস উদযাপন

১৯

২৯৫ জন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করল চসিক

২০
X