স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম ১৯৯৩ সালের ১৯ নভেম্বর গঠন হয়েছিল বরিশাল জেলা যুবলীগের কমিটি। জাকির হোসেনকে সভাপতি ও ফজলুল করীম শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত দুই বছর মেয়াদি কমিটি পার করেছে প্রায় ৩০ বছর।
ওই কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন কয়েকজন। কমিটির অনেকে আবার রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছেন।
জেলার অধীনস্ত ১০টি উপজেলা এবং ৬টি পৌরসভা ইউনিটেও যুবলীগের কার্যক্রম চলছে ‘আদুভাই’দের নেতৃত্বে। এসব ইউনিট কমিটির মেয়াদও প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি।
এর পরেও বরিশাল জেলা যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেই স্থানীয় বা কেন্দ্রের নেতাদের। হয়নি কোনো সম্মেলনও। ফলে নতুন নেতৃত্ব যেমন বিকাশ ঘটছে না, তেমনি মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রমেও চলছে স্থবিরতা।
যদিও বরিশাল জেলা যুবলীগের এমন ভঙ্গুর পরিস্থিতির জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করছেন পদ বঞ্চিত যুবলীগ নেতারা। তাদের সদিচ্ছার অভাব আর নেতৃত্ব দখলের মনোভাব জেলা যুবলীগকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
তবে ৩০ বছরেও বরিশাল জেলা যুবলীগের সম্মেলন বা কমিটি না হওয়ার বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীনের ২২ বছর পর প্রথম ১৯৯৩ সালের ১৯ নভেম্বর বরিশাল জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ৩০ বছর আগে গঠিত যুবলীগের কমিটির সভাপতি মো. জাকির হোসেন বর্তমানে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম শাহীন রয়েছেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে। এর বাইরে আরও কয়েকজন যুবলীগ নেতার নাম রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলেন, ‘বরিশালে জেলা যুবলীগের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। কেননা যুবলীগের যারা নেতৃত্বে আছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা। কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচি আসলে তা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসছে পদবঞ্চিত নেতারা। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ থেকে ধার করা লোক নিয়ে বরিশালে যুবলীগের অস্তিত্বের জানান দিতে হচ্ছে।'
তারা বলেন, বর্তমানে যারা পদে আছেন তাদের এখন কাজ শুধু দলীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ অনুসরণ করা। রাজনৈতিক কারণে ইউনিট কমিটির কাউকে বহিস্কার করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ নেই। এমনকি তাদের নিজস্ব লোকবল এবং সমর্থকও এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর কারণ হিসেবে তারা জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দায়ী করছেন।
নেতারা বলেন, ‘রাজনৈতিক গ্রুপিং এবং শীর্ষ নেতাদের সদিচ্ছার অভাবে জেলা যুবলীগের সম্মেলন বা নতুন কমিটি হচ্ছে না। এমনকি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের মতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি না হওয়ায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিকলীগসহ সব কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় চলছে।
যদিও বর্তমানে কাগজে-কলমে যারা নেতৃত্বে আছেন তারাও এখন আর নিজেদের যুবলীগ বলে পরিচয় দিতে চাচ্ছেন না। তারা চাচ্ছেন সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করবে এবং নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে।
বরিশাল বরিশাল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম শাহীন বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রথম বরিশাল জেলা যুবলীগের কমিটি হয়। ওই সময় যুবলীগের নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে রাজি হয়নি কেউ। আমি এবং সভাপতি জাকির হোসেনই এগিয়ে এসেছিলাম, কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছি এবং নতুন কমিটি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমরাই নেতৃত্বে আছি।
তিনি বলেন, আমরাও চাই নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হোক। কিন্তু এটা আমার করা সম্ভব নয়। নতুন নেতৃত্ব বা নতুন কমিটি করতে হলে কেন্দ্রের উদ্যোগ নিতে হবে। কেন্দ্র থেকে আমাদের বললে আমরা সম্মেলন আয়োজন করব। কিন্তু নতুন কমিটির বিষয়ে আমাদের কোন চাপ নেই।
চাপ না থাকার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে জানিয়ে ফজলুল করিম শাহীন বলেন, ২০০৮ সালের পরে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের যেসব কমিটি হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের প্রকৃত এবং ত্যাগী নেতাদের জায়গা হয়নি। যারা শীর্ষ পদ পেয়েছেন তারা হয়তো জাতীয় পার্টি, নয়তো অন্য কোন দল থেকে আসা। এসব কারণে তৎকালীন সময়ে যুবলীগের কমিটি হয়নি।
ফজলুল করিম শাহীন, বরিশালে বর্তমানে অনেক যোগ্য নেতা আছে, যারা ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেক নেতা আছেন যারা পদে না থেকেও যুবলীগকে এগিয়ে নিয়েছেন। তাদের নিয়ে নতুন করে যুবলীগের কমটি সাজানো হোক। এতে কমিটির ধারাবাহিকতা যেমন বজায় থাকবে, তেমনি নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। তাদের নেতৃত্বে বরিশাল জেলা যুবলীগ আরও শক্তিশালী হবে। আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে পারবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
এদিকে, ৩০ বছরেও যুবলীগের সম্মেলন বা কমিটি গঠন না হওয়ার বিষয় কথা হয় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের সঙ্গে। তবে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যুবলীগের কমিটি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
মন্তব্য করুন