আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খড়ের ঘরেই তাদের বসবাস

খড়ের ছাউনি ঘর। ছবি : কালবেলা
খড়ের ছাউনি ঘর। ছবি : কালবেলা

দিন যতই যাচ্ছে ততই হারিয়ে যেতে বসেছে খড়ের ছাউনি ঘর। এক সময় দেশের প্রতিটি গ্রামে বা মহল্লায় সেই চিরচেনা এ ঘরের প্রচলন ছিল, যার দেখা মিলত মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত। রূপসী-গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খড়ের ছাউনির তৈরি ঘর আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে খড়ের তৈরি ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে।

কিন্তু শহরের রঙিন বাতি আর চাকচিক্যের মধ্যে যেখানে কোটি কোটি মানুষের বসবাস, ঠিক একই সময়ে পুরোনো ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার স্মৃতিকে আগলে রাখতে সেই সত্তর বা আশির দশকের খড়ের ঘরেই জীবনযাপন করছেন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা ধামোর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা রাজাগাঁও গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার। শুধু শোবার ঘরই নয়, রান্নাঘর, গোয়ালঘর এমনকি গোলাঘরও তারা তৈরি করেছেন খড় দিয়ে।

অর্থবিত্ত, ধনসম্পদ ও আবাদি জমিজমা থাকা সত্ত্বেও তৈরি করতে চান না পাকা দালান অথবা আধাপাকা টিনশেডের ঘর। কারণ তারা চান পুরোনো ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার রেখে যাওয়া খড়ের ঘরগুলো এভাবেই স্মৃতি হিসেবে রয়ে যাক যুগ যুগ ধরে।

পাকা ও আধাপাকা ঘরের ইট, বালু, রড ও সিমেন্টসহ ইত্যাদি জিনিসের মতো এসব খড়ের ঘর তৈরি করতে তেমন কোনো উপকরণ লাগে না। শুধু বাঁশ ও ধান কাটার পরে ধানের খড়ই যথেষ্ট।

এছাড়াও এ ঘর তৈরিতে লাগে না কোনো ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকৌশলী। দরকার গ্রামের অভিজ্ঞ খড়ের ঘর তৈরি কারিগরের। এ ঘর তৈরি করতে ধান কাটার পর ধানের খড়গুলোকে প্রথমে রৌদ্রে শুকাতে হয়। পরে বিশেষ কায়দায় ধানের খড়গুলোকে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপ ও বাঁশের মাধ্যমে দুটি ছাউনি তৈরি করা হয়। প্রথমে বাঁশের তৈরি বেড়ার ওপরে সেই সাজানো খড়গুলোকে বিছিয়ে দেওয়া হয়। বিছানো খড়গুলোর উপরে আবার বাঁশের কয়েকটি অংশ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়। যেন প্রবল ঝড়, বৃষ্টি অথবা বাতাসে খড়গুলো উড়ে যেতে না পারে।

খড় তাপ কুপরিবাহী বলে শীতকালে খড়ের ঘর গরম থাকে। আসলে ঘরের চাল বানানোর সময় এর মধ্যে অসংখ্য বায়ু কুঠুরি তৈরি হয়, এগুলোতে বাতাস আটকে থাকে। যার কারণে গরমের সময় খড়ের ঘরে ঠান্ডা অনুভূত হয়।

আবার বাতাস তাপ কুপরিবাহী বলে ঘরের ভেতরের উত্তাপ বাতাসকে বাইরে বের হতে দেয় না, বাইরের উত্তাপ বাতাসকে ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়, যার ফলে ঘরের ভেতরের বাতাস বের না হওয়ার কারণে খড়ের ঘরের ভেতরে শীতকালে গরম অনুভূত হয়।

খড়ের ঘরের মালিক কালবেলাকে জানান, আমরা এই ঘরে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বাস করে আসছি। পাকা বা আধা পাকা ঘর তৈরি করতে আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা সম্পদ রয়েছে। এই ঘরগুলো আমাদের বাপ-দাদার রেখে যাওয়া স্মৃতি। তারাও এসব ঘরে তাদের জীবন কাটিয়েছেন। এগুলো আমরা অসম্মান করতে পারি না। আমরা এই ঘরে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

আইনুল হক জানান, এসব ঘর বেশ আরামদায়ক। শীতকালে গরম আর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা অনুভূত হয়। বর্ষার সময় বৃষ্টি এলে খড়ের ঘরে তেমন শব্দ পাওয়া যায় না। আমরাও আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য আর বাপ-দাদার পুরোনো স্মৃতিকে আগলে রাখার জন্য এসব ঘরে এখনো বসবাস করছি, যদিও আমাদের পাকা ঘর তৈরি করতে কোনো অর্থ-সম্পদের অভাব নেই।

মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জীবন মানেরও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ তার নতুনত্বকে বরণ করতে গিয়ে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী এই খড়ের ঘরগুলো। যা হয়তো আর দেখা মিলবে না আগামী নতুন প্রজন্মের চোখে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে বড় লাফ, ফের ইতিহাস

জবি শিক্ষার্থীদের বিশেষ বৃত্তি, যেভাবে করতে হবে আবেদন

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

শহিদুল আলমের আটকের প্রচারিত ছবির বিস্তারিত জানা গেল

ডেঙ্গু জ্বরে জবির সাবেক শিক্ষার্থী সানজিদার মৃত্যু

সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা পেছানোর দাবি

প্রতি বছর ১ ফুট হারে তলিয়ে যাচ্ছে যে শহর

ঘুমন্ত স্বামীর গায়ে ফুটন্ত তেল ঢেলে মরিচ গুঁড়া মাখিয়ে দিলেন স্ত্রী

ধর্ষণের অভিযোগ করার পর অভিযোগকারীকেই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার

আ.লীগে যোগ দেওয়া রফিকুল এবার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী

১০

শহিদুলের ভিডিওবার্তা নিয়ে যে তথ্য দিল বাংলাফ্যাক্ট

১১

মাঝ সমুদ্রে ভাসতে থাকা ২৬ জেলেকে উদ্ধার

১২

কেন শুধু জাতীয় দলের হয়েই খেলতে চাইলেন রোনালদো?

১৩

যে শহরে দিনে ২ ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ!

১৪

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে লালুর বক্তব্য ব্যক্তিগত : বিএনপি

১৫

নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া শাপলার ৭ নমুনা প্রকাশ এনসিপির

১৬

লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়রের সঙ্গে বাসস চেয়ারম্যানের মতবিনিময় 

১৭

ডিআরইউ বর্ষসেরা রিপোর্টের জন্য পুরস্কার দেবে নগদ

১৮

হৃদয়-মিরাজে ভর করে বাংলাদেশের লড়াই

১৯

শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

২০
X