সাতক্ষীরায় পাঁচ সাংবাদিকের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার কোনো সত্যতা পায়নি পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলায় উল্লিখিত পেনাল কোড ধারার অপরাধের কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া ও পাঁচ সংবাদিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি, এই মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে আদালতে।
আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) সাতক্ষীরার আমলী আদালতে মামলার প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিন ছিল। এ সময় মামলার প্রতিবেদনে থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
মামলার বিবাদীরা হলেন- ঢাকা পোস্টের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সোহাগ হোসেন, ঢাকা মেইলের প্রতিনিধি গাজী ফারহাদ, স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রতিবেদক হোসেন আলী, দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার প্রতিনিধি শাহীন বিশ্বাস ও দৈনিক মুক্ত খবরের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান সোহাগ।
অপরদিকে, মামলার বাদী সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি গ্রামের মৃত. জব্বার সরদারের ছেলে জহুর আলী সরদার।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদী জহর আলী সরদার তালার আটারই গ্রামে শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপক। মামলার বিবাদীরা ওই ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ কোম্পানির সামনে বিবাদীরা পুনরায় চাঁদা দাবি করে একই সঙ্গে বাদীর কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এসব বিষয় উল্লেখ করে গত ২ এপ্রিল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা হয় মামলাটি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাতক্ষীরাকে ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে দুই দফায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বৃদ্ধি করেন আদালত। বুধবার (১৬ আগস্ট) মামলা প্রতিবেদনের দাখিলের দিন ধার্য ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টের সেমাই কারখানাতে যায়। সেখানে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী ও যন্ত্রাংশের ছবি সংগ্রহ করে সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে সেখানকার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা জহর আলীসহ অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে কথোপকথন হয় সাংবাদিকদের। তথ্য সংগ্রহ, স্থির ছবি গ্রহণ ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথোপকথন শেষে স্থান ত্যাগ করেন সাংবাদিকরা।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ রয়েছে, অভিযুক্ত ঘটনাটি নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে তদন্ত করেছে পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই সঙ্গে বাদীর মনোনীত মামলার তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বাদীর কাছে চাঁদা চাওয়া ও টাকা ছিনতাইয়ের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া মামলার নথিতে যে অপরাধের পেনাল কোডগুলো উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর কোনোটার সাথে বিবাদীদের কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী জহর আলী সরদার বিবাদীদের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়া ও ছিনতাইয়ের কোনো প্রকার প্রমাণ দিতে পারেনি।
পাঁচ সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কর্মরত সাংবাদিকরা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সাতক্ষীরার জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা মিথ্যা মামলার নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধন করেন। তা ছাড়া, পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার লিখিত নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সাতক্ষীরার ২৫ জন বিশিষ্ট সাংবাদিক।
মন্তব্য করুন