রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৮ এএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তিস্তার ভাঙনরোধে মার্চে কাজ শুরু হবে : রিজওয়ানা

পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি : কালবেলা
পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি : কালবেলা

তিস্তার দুই পাড়ের ৪৫ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকার মধ্যে অধিক ভাঙনকবলিত ২০ কিলোমিটার এলাকার ভাঙনরোধের কাজ আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করা হবে। বাকি অংশের ভাঙনরোধের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেলসেতুসংলগ্ন এলাকায় ‘তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক’ গণশুনানি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্দশার কথা শুনতে গণশুনানিতে উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভাঙনরোধের কাজ তদারকির জন্য একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ করে দেওয়া হবে। যেখানে ভাঙনপ্রবণ পাঁচ জেলা থেকে একজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকার পাশাপাশি স্থানীয় এলাকার একজন করে প্রতিনিধিত্ব করবে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এমনটি করা হবে। তিস্তাপাড়ের মানুষের মতামত নিয়েই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, আপনাদের মতামত ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড চীনের সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো চুক্তি চূড়ান্ত করবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইনে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনারা স্থানীয়রা থাকবেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, তিস্তা চুক্তির খসড়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ২০১১ সাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ভারত থেকে কিছু আদায় করতে পারেনি। তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলেছে। তারা তিস্তার কথা বলতে পারেনি; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার শিরদাড়া উঁচু করে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য ভারতের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের কূটনৈতিক চাপ দেওয়া হবে যাতে তারা বাধ্য হয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

‘তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক’ গণশুনানি অনুষ্ঠানে কাউনিয়া উপজেলার হয়বত খাঁ চরের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। পৈতৃকসূত্রে পেয়েছিলেন ৩০০ বিঘা জমি; কিন্তু তিস্তার পেটে জমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। মাঝেমধ্যে রিকশাও চালান। তিস্তা নিয়ে গণশুনানিতে আব্দুর রশিদের জীবনের এমন করুণদশা জানান তার ছেলে আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, জমিজমা-বাড়িঘর সব হারিয়ে মাকে নিয়ে তিনি এখন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। খুবই কষ্টে চলছে তাদের জীবন।

গণশুনানিতে অংশ নেন তিস্তাবেষ্টিত ৫ জেলার কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় তারা সরকারের দুই উপদেষ্টার কাছে তাদের দুর্দশার কথা জানান। উপদেষ্টাদের তারা বলেন, যুগ যুগ ধরে তিস্তায় বাড়িঘর জমিজমা হারিয়ে সরকার শুধু ত্রাণ দিয়েছে। আর ত্রাণ নয় বরং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, ‘হামার হইছে কপাল পোড়া, হামার দুঃখ কেউ বোঝে না। তিস্তার ভাঙনে রাজপুর এখন ফকিরপুর হইছে। একনা চরোত যাও, হামার বাঁধভাঙা না দেখলে হামার দুঃখ বুঝবেন না। আগের সরকার কিছু করে নাই এবার আর হামাক ঠগান না বাহে।’

গণশুনানিতে বক্তব্য দেন এই এলাকার বাসিন্দা ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুধু কল্পনাতেই; কিন্তু বাস্তবে নেই। বর্ষা মৌসুমে তিস্তাপাড়ের মানুষের বাড়ি বারবার ভেঙে যায়, তাদের কষ্ট আমরা জানি। ভারত তিস্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মামলা করে পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হবে।

নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনার নামে এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করেছে। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা শুকিয়ে মরুভূমি হয়। আবার বর্ষায় পানি প্রত্যাহারে ফেঁপে ফুলে উঠে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ডুবিয়ে দেয় এ জনপদ। বাঁচামরার খেলা থেকে বাঁচতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে আরও বক্তব্য দেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব একেএম তারিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, বিএনপি নেতা এমদাদুল ভরসা, একেএম মমিনুল হক প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রিবেট সুবিধাসহ পৌরকর পরিশোধ-ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ বাড়ল

ডাক্তারদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত

এ দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির : মুতাছিম বিল্লাহ

১০ ঘণ্টা পরেও স্বাভাবিক হয়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ভোগান্তি চরমে 

‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত জামিন সংক্রান্ত বক্তব্য আইজিপির নয়’

বান্ধবীর কাছে ‘হিরো’ হতে গিয়ে ৪২২৯ যাত্রী নিয়ে প্রমোদতরী ডুবিয়ে দেন ক্যাপ্টেন!

মায়ের পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন যুবক‌, জানালা খুলে গুলি করে হত্যা

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২০০

কী এই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, কেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু?

হিন্দু সম্প্রদায়কে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা / প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের : তারেক রহমান

১০

স্বস্তি ফিরেছে খাগড়াছড়িতে, যান চলাচল শুরু

১১

দেশের প্রশ্নে কোনো বিভাজন নয় : ডিসি তানভীর

১২

বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবি পরিচালক গায়ক আসিফ

১৩

বরিশালে ৩০ সনাতন ধর্মাবলম্বীর বিএনপিতে যোগদান

১৪

আমি একজন মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে গর্ব করি : ধর্ম উপদেষ্টা

১৫

আ.লীগ গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে : ডা. জাহিদ

১৬

আফগান সিরিজের আগে সুসংবাদ পেলেন একাধিক টাইগার ক্রিকেটার

১৭

সর্দার দুলালসহ আন্তঃজেলার ১৩ ডাকাত গ্রেপ্তার

১৮

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০

১৯

আ.লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কী বললেন আইন উপদেষ্টা

২০
X