সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা চালিয়েছে তার স্বজনরা।
সোমবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের ৩৫নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় চিকিৎসকের দুটি কক্ষ ও নার্স স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়।
হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতি ঘোষণার পরপরই হাসপাতালের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন সব ইন্টার্ন চিকিৎসক। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা। হামলার ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা এক রোগীকে আজ দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত ওই রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে স্বজনরা চিকিৎসককে খোঁজ পায়নি। পরে ওই রোগীর মৃত্যু হলে স্বজনরা চিকিৎসকদের দুটি কক্ষ ও নার্স স্টেশনে হামলা চালান। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুরও চালান তারা।
হামলায় কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, আনসার সদস্যসহ চারজন আহত হন। খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক ভূঞাসহ হাসপাতাল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ সময় পুলিশ চারজনকে আটক করে।
হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাতে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. রাকিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ক্রমাগত ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান এবং শারীরিক হেনস্তা করার চেষ্টা করে। এরপর হাসপাতালে ভাংচুর চালায়। এ ঘটনা প্রমাণ করে হাসপাতালে চিকিৎসকদের কোনো সুস্থ কর্মপরিবেশ নেই। এ অবস্থায় হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, দোষীদের বিচারের দাবিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হলো।
হাসপাতালে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মো. মোস্তাকিম বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রোগীর স্বজনরা মৃত্যু মেনে নিতে পারে না। তারা ডাক্তারদের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক ভূঞা কালবেলাকে বলেন, রোগীরা স্বজনরা হামলা চালিয়ে চিকিৎসকের দুটি কক্ষ ও নার্স স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছে। হামলায় আমাদের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, আনসার সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন। চারজনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টার্ন চিকিৎকরা ধর্মঘট ডেকেছেন। আমি তাদের বলেছি রোগীদের যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে ওসমানী মেডিকেল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। চিকিৎসকের দুটি কক্ষ ও নার্স স্টেশন ভাঙচুর এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, আনসার সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মন্তব্য করুন