সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি রপ্তানিতে অতি পরিচিত জেলা সাতক্ষীরা। চিংড়ি চাষের জন্য এ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হলো আশাশুনি উপজেলা। এই উপজেলা থেকে হাজারো সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই জীবিকা, ব্যবসায়িক, চিকিৎসা, মামলা-মোকদ্দমা ও প্রশাসনিক কাজে সাতক্ষীরা জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকে। আশাশুনি উপজেলা থেকে জেলা শহরে বিআরটিসির বাস চলাচল না থাকায় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাস-মিনিবাসে মানুষজন চলাচল করে দীর্ঘদিন ধরে।
গত কয়েক বছর পরিবহনের তুলনায় যাত্রীদের অধিক চাপ থাকায় জেলা শহরে পৌঁছতে আশাশুনি উপজেলার দুর্গম এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বাস-মিনিবাস ছাড়াও বিকল্প যানবাহন ব্যবহার করে থাকে।
সড়কগুলোতে চলাচলরত মিনিবাস সিটিং সার্ভিস না থাকায় ধারণক্ষমতার থেকেও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অভিযোগ আছে চলাচলরত মিনিবাস চালক ও স্টাফদের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। বাধ্য হয়ে ভোগান্তি কমাতে বিকল্প যানবাহনে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন পথচারীরা।
এদিকে এসব বিকল্প যানবাহন সড়ক থেকে উচ্ছেদ করার নামে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে লাল বাহিনী হিসেবে পরিচিত বহিরাগত ব্যক্তিদের বাঁশের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যাত্রী নিয়ে ছোটখাটো যানবাহন সড়কে চলাচল করলেই লাল বাহিনীর সদস্যদের হামলার শিকার হতে হয় চালকদের। আর এদের হাত থেকে ছাড়া পেতে দিতে হয় নগদ টাকা। এই লাল বাহিনীকে একেকদিন একেক এলাকায় বসতে দেখা যায়। সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনি সড়কে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চারটি স্পটে তাদের দেখা যায়। প্রতিদিনই সংঘবদ্ধ হয়ে তারা তাদের এই নির্যাতন ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
রক্তদান কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক (ব্লাড ডোনার) আশাশুনির নাঈম হোসেন বলেন, জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের রক্তদানের জন্য রক্তদানকারীকে ইজিবাইকে করে জেলা শহরে নিতে হয়। পথিমধ্যে প্রতিনিয়ত সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা এসব লাল বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় আমাদের। সমস্যার কথা জানালেও কোনোভাবেই রেহাই পাওয়া যায় না তাদের হাত থেকে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রব জানান, বাসে অত্যন্ত ভিড় থাকায় এবং বিভিন্ন স্থানে সময়ক্ষেপণ বেশি হয় বিধায় আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থীরা মিলে ইজিবাইকে করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পথিমধ্যে ইজিবাইক আটক করে লাল বাহিনী। কলেজ শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থী পরিচয় দিলেও কোনো সুফল মেলেনি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাসে কলেজে পৌঁছালেও নির্দিষ্ট সময় পরীক্ষার হলে ঢুকতে পারিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বল্প খরচে ইজিবাইকে করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে ইজিবাইক আটক করে রাখে এ লাল বাহিনী। ৩০০ টাকা (চাঁদা) বকশিশ না দিলে ইজিবাইক ছাড়তে রাজি হয়নি তারা।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, তাদের চাঁদাবাজির বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার কথা বললে লাল বাহিনীর সদস্যদের পকেটে প্রশাসন বলে হুঙ্কার দেয়। ক্ষমতা থাকলে তাদের নামে মামলা করতে বলে।
লাল বাহিনীর এই দৌরাত্ম্য শুধু সাতক্ষীরা টু আশাশুনি সড়কে তা কিন্তু নয়। সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-কলারোয়া, সাতক্ষীরা-শ্যামনগর প্রতিটি সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিদিন একই কাজ করেছে এই লাল বাহিনী।
এ বিষয়ে আশাশুনি থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমার থানা এলাকার মধ্যে তাদের বসার খবর এখনো আমি পাইনি। তারা সদর উপজেলার মধ্যে বসে বলে শুনেছি।
আশাশুনি থানা এলাকার মধ্যে তাদের দেখামাত্রই থানায় জানানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আশাশুনি থানা এলাকায় কোথাও বসে এমন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রনি আলম নূর বলেন, আমি যেহেতু এখানে অল্পকিছু দিন যোগদান করেছি, যোগদানের পরে এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলেই আমি ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে সাতক্ষীরা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শ্যামল কুমার চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানার জন্য বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন