মাটি আর ফসলের ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বায়োলিড প্রযুক্তিতে বাড়ছে ধানের ফলন। শুধু ফলন বৃদ্ধি নয়, এতে বাড়াচ্ছে জমির উর্বরা শক্তিও। এ প্রযুক্তিতে ধান আবাদ করে যশোরের চৌগাছা উপজেলার দুই কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
ধানচাষ বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য শুধু জীবিকার মাধ্যম নয়, বরং বেঁচে থাকার সংগ্রামের নাম। বছরের পর বছর রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের ওপর নির্ভর করে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভালো ফলনের আশায়। কিন্তু রাসায়নিক ব্যবহারে জমি যেমন ক্লান্ত হচ্ছে, তেমনি উৎপাদনেও আসছে ঘাটতি। এ বাস্তবতার মধ্যেই ধীরে ধীরে কৃষকদের মাঝে আশার আলো হয়ে উঠছে বায়োলিড। একটি জৈব ছত্রাকনাশক ও অণুজীব সার, যা শুধু জমির উর্বরতা বাড়াচ্ছে না, গাছকেও করছে সুস্থ ও সবল।
যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার অফরা গ্রামের কৃষক মো. ওলিউর রহমান সেই আশার একজন বাস্তব উদাহরণ। প্রতিবছর তিনি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। তবে সবসময়ই একটা প্রশ্ন তাকে ভাবাতো যে কী করলে ফলন আরও বাড়বে, গাছ থাকবে সুস্থ। এবার স্থানীয় বালায়নাশক ডিলারের পরামর্শ থেকে তিনি তার ৮ বিঘা জমিতে বায়োলিড প্রয়োগ করেন। ফলাফল দেখে খুশিও তিনি।
তিনি বলেন, যেখানে বায়োলিড ব্যবহার করিনি, সেখানে যা ফলন পাব, সেখানে প্রয়োগ করা জমিতে প্রতি বিঘায় ৩-৪ মণ বেশি ধান পাব বলে আশাবাদী। গাছ সুস্থ, রোগবালাইও কম।
এ অভিজ্ঞতা শুধু তার একার নয়। চৌগাছারই পেটভরা নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল মাজিদ এ বছর তার ১ বিঘা জমিতে বায়োলিড ব্যবহার করেছেন। আশপাশের জমিগুলোর তুলনায় তার ধানের গাছগুলো বেশি গোছালো, সবল আর রোগমুক্ত।
তিনি বলেন, সবাই বলছে, আমার জমির ধান ভালো হয়েছে। আমি আশা করছি, অন্যদের তুলনায় আমার জমিতে ২-৩ মণ বেশি ধান হবে।
বায়োলিড হলো ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি সমৃদ্ধ জৈব অণুজীব সার ও ছত্রাকনাশক। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে এটি সরাসরি মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে। জমির ক্ষতিকারক রোগজীবাণু দমন করে এবং উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে। ফলে গাছের গোড়া শক্ত হয়, গাছ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয় এবং স্বাস্থ্যকর অবস্থায় বেড়ে ওঠে।
বায়োলিডের মূল কাজ হলো মাটি শোধন করা। মাটির ভেতরে যে উপকারী ছত্রাক ও অণুজীবের বাস, তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে জমির উর্বরতা ধরে রাখে। এতে দীর্ঘমেয়াদে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, বাড়ে ফলন।
বায়োলিড বাজারজাত করছে ফেরোমন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কে এম মনোয়ার হোসেন হিমেল বলেন, রাসায়নিকের বিকল্প হিসেবে বিষমুক্ত ধান ও সবজি উৎপাদনে বায়োলিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমরা চাই দেশের প্রতিটি কৃষক এ পণ্যের সুফল পান। কৃষকদের জন্য নিয়মিত মাঠ দিবস আয়োজন করছি, যাতে তারা নিজের চোখে দেখে বুঝতে পারেন, এটি কতটা কার্যকর।
তিনি আরও বলেন, শুধু ফলন বাড়ানো নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ আর বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন। এ দুই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করছে তাদের প্রতিষ্ঠান। কারণ সুস্থ মাটি মানেই সুস্থ ফসল, সুস্থ মানুষ।
কৃষকদের এমন সফল অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজমীর হোসেন বলেন, বায়োলিড মাটি শোধনের জন্য খুবই ভালো একটি পণ্য। এটি ব্যবহারে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, গাছ শক্তিশালী হয় এবং রোগবালাই কম হয়। তাই আমি কৃষকদের এটি ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করছি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন রাসায়নিক সার ব্যবহারে জমির প্রাণশক্তি কমে যায়। জমি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ফলে ফলনও কমে। এমন অবস্থায় বায়োলিডের মতো জৈব সমাধান কৃষির জন্য আশার নতুন দুয়ার খুলছে।
মন্তব্য করুন