ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ১০:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তিস্তা চরের নারী শ্রমিকদের মেলে না ন্যায্য মজুরি!

জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন নারীরা। ছবি : কালবেলা
জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন নারীরা। ছবি : কালবেলা

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে জীবনধারণের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন নারী শ্রমিকরা। পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের জেগে ওঠা চরগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও তাদের ভাগ্যে জোটে দৈনিক মাত্র ৩০০-৩৫০ টাকা মজুরি। অথচ একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা রোজগার করেন এর প্রায় দ্বিগুণ, ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষি শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য হলেও, মে দিবসের আলোচনাতেও যেন তারা থেকে যান অন্তরালে। ভুট্টা, মরিচ, আলু কিংবা বাদাম তোলা বা মাটির কঠিন কাজে পুরুষের সমান তালে অংশ নিয়েও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই নারী শ্রমিকরা। দিনের শেষে ক্লান্তি আর স্বল্প মজুরিই তাদের নিত্যসঙ্গী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরুষদের সমান পরিশ্রম করেও মজুরির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বৈষম্য দেখা যায়। এমনকি কাজের ধরনের অজুহাত দেখিয়ে পুরুষদের বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া হলেও নারীরা সেই সুযোগ পান না।

সরেজমিনে ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা যায়, ভুট্টা, বাদাম ও মরিচ তোলার ভরা মৌসুমে নারী শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। এখানকার মোট শ্রমিকদের প্রায় ৬০ শতাংশই নারী। এমনকি মরিচ ও ভুট্টার ক্ষেতে প্রায় শতভাগ শ্রমিকই নারী। পুরুষ শ্রমিকদের দেখা মেলে কেবল ভুট্টা ভাঙার মেশিনের কাছে, যেখানে নারীরাই ভুট্টা উঠিয়ে দেন।

ভুট্টা তোলায় ব্যস্ত পরিমনি ক্লান্ত স্বরে জানান, আমরা সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে আসি। ভুট্টা তুলি আর বিকেল ৫টার পরে ছুটি পাই। আমাগোরে ৩৫০ টাকা কামলা দেয়।

একই ধরনের অভিজ্ঞতা জরিনা বেগমের। তিনি বলেন, এহন ভুট্টা আর মরিচের কাম। পুরুষের সাথে আমরাও ভুট্টা ভাঙ্গি। এই রোদের মধ্যে সারাদিন কাম করি, ৩৫০ টাকা পাই। আর ওই যে তিনজন পুরুষ কাম করে, তারা ৬০০-৭০০ টাকা পায়। একই কাম, একই সময় অথচ আমরা পাই অর্ধেক দাম।

সালেহার অসহায় প্রশ্ন যেন কঠিন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, কী কাম করুম কন দেহি? না করলে খামু কী? আমরা গরীব মানুষ। আমরাও মানুষ, তারাও মানুষ। একই কাম করি কিন্তু আমাগো মজুরি অর্ধেক দেয়!

জমির মালিক একাব্বর আলীও মজুরি বৈষম্যের কথা স্বীকার করে বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। নারী শ্রমিক দিয়ে ভুট্টা তোলানো হচ্ছে, কারণ তাদের মজুরি কিছুটা কম। পুরুষদের দ্বিগুণ টাকা দিতে হয়। অথচ নারীরাও সমান কাজ করে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ মনে করছেন, এই মজুরি বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক অবিচারই নয়, এটি সমাজের নারীদের প্রতি চরম অবমূল্যায়ন। তাদের দাবি, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই নারী শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নীলফামারী জেলা মুখ্য সংগঠক রাশেদুজ্জামান রাশেদ কালবেলাকে বলেন, সর্বত্রই নারীদের সঙ্গে বৈষম্যের চিত্র আজও বিদ্যমান। নারী শ্রমিকদের শ্রমের এই বৈষম্য দূর করতে সরকার এবং প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু কাগজে-কলমে নীতিমালা প্রণয়ন করলেই হবে না, মাঠ পর্যায়ে তার সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি।

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী ডিমলা উপজেলায় কৃষি কর্মে নিযুক্ত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নারী শ্রমিক হলেও তাদের ন্যায্য অধিকার আজও অধরা। তিস্তা চরের এই নারীদের জীবন কবে আলোর মুখ দেখবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কড়াইল বস্তির আগুনে দেড় হাজার ঘর পুড়েছে : ফায়ার সার্ভিস

হাতিয়ায় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান মিন্টু চিরনিদ্রায় শায়িত

ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের সমর্থনে যুবদলের গণমিছিল

নতুন জোটের ঘোষণা দিল এনসিপি

কড়াইল বস্তিতে আগুন, তারেক রহমানের সমবেদনা

কড়াইল বস্তিতে আগুনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ ও সমবেদনা 

গণভোট অধ্যাদেশ জারি করে গেজেট প্রকাশ

জেসিআই ঢাকা ইউনাইটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মাসউদ

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

১০

চীনা দূতাবাস কর্মকর্তার সঙ্গে চৌদ্দগ্রাম জামায়াত নেতাদের মতবিনিময়

১১

নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর সঙ্গে সেলফি তুলতে মুখিয়ে যুবসমাজ

১২

অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার ৮৩২ ভরি স্বর্ণ

১৩

শুভর বুকে ঐশী, প্রেম নাকি সিনেমার প্রচারণা?

১৪

৭০৮ সরকারি কলেজকে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ

১৫

ইউএস বাংলার সাময়িকীর কনটেন্ট তৈরি করবে অ্যানেক্স কমিউনিকেশনস

১৬

সাদিয়া আয়মানের সমুদ্র বিলাশ

১৭

পৌরসভার পরিত্যক্ত ভবনে মিলল নারীর মরদেহ 

১৮

কড়াইলের আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানাল ফায়ার সার্ভিস

১৯

প্রশাসনের ৭ কর্মকর্তার পদোন্নতি

২০
X