সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন শাহ্ আরেফিন ও অদৈত্ব মহাপ্রভু মৈত্রী সেতুর কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি।
জানা যায়, ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির জন্য ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ৩০ মাস মেয়াদে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মে মাসে। সীমান্ত এলাকাসহ জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও মেয়াদ শেষ হয়ে ৭ বছর পেরিয়েও শেষ হয়নি কাজ।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত ৬ মাস আগে সেতুর সম্পূর্ণ পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। স্প্যান ১৫টির মধ্যে ১২টি হয়েছে। ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৬০টির কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০টি গার্ডার ও ৩টি স্প্যান নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে। গত জুন মাসের বন্যার সময়ে বালুভর্তি বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি গার্ডার ভেঙে পানিতে পড়লে সেতুর নির্মাণকাজ থমকে পড়ে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, দফায় দফায় বন্যা ও করোনা মহামারির কারণে সেতুটির নির্মাণকাজ ব্যাহত হয়েছে। তাছাড়া সেতু নির্মাণকাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান সময়মতো না পাওয়া নির্মাণকাজ বিলম্বের অন্যতম আরেকটি কারণ। ইতোমধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে আরও এক বছর সময় লাগবে বলেও জানিয়ছেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, এই সেতুটি নির্মাণ হলে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগরসহ বৃহত্তর নেত্রকোনা জেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। এতে তাহিরপুরের পর্যটন ও ব্যবসা- বাণিজ্য এগিয়ে যাবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ৭ বছরেও কাজ শেষ হচ্ছে না। এতে তাহিরপুর উপজেলাবাসী স্বপ্নও পূরণ হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থামবে না।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, অনন্য সৌন্দর্যে ভরপুর রূপের নদী খ্যাত যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির কাজ শেষ হলে সীমন্ত এলাকার রূপ পাল্টে যাবে। পর্যটকদের সহজ হবে তাহিরপুরের বিভিন্ন পর্যটনস্পট ঘরে দেখতে। এলাকার ব্যবসা- বাণিজ্য প্রসারিত হবে। তাছাড়া সীমান্ত এলাকার স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগতদের নৌকা পারাপারের কষ্ট লাঘব হবে। সহজ হয়ে আসবে পরিবহন ব্যবস্থা।
প্রকল্প পরিচালক মিয়া মোহাম্মদ নাসিম বলেন, করোনা মহামারি, বন্যা ও বালুভর্তি বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি গার্ডার ভেঙে যাওয়ার কারণে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ করা যাবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ তো অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। এখন কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা যায় এ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঠিকাদারকে বলা হচ্ছে। তারা ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলের দিকে কাজটি শেষ করবে বলে জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন