সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ন্যায্যমূল্য পেলেই বিক্রি হবে পুরো একটি গ্রাম। শতাধিক পরিবারের বসতির এই গ্রামের প্রকৃত দাম না পেলে এবং যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে কাফনের কাপড় পড়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন গ্রামবাসী।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। আর জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের আহাম্মাদপুরের ডোমবাড়িয়া মহল্লার শতাধিক পরিবারের জমি, বাড়িসহ সব স্থাপনা উচ্ছেদের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
এদিকে জমি ও বাড়ির প্রকৃত মূল্য না পেলে অন্যত্র জায়গা কিনে পুনর্বাসিত হতে পারবেন না গ্রামবাসী। তাই জমি ও বাড়িঘরের ন্যায্যমূল্য এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গ্রামের কয়েকশ নারী-পুরুষ। অন্যথায় কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি রূপবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আহাম্মাদপুর সড়কে জমি ও বাড়ির মালিক নারী-পুরুষরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। সেইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সরেজমিনে দেখে জমি ও বাড়িঘরের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের আবেদন জানানো হয়েছে।
গ্রামবাসীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে আবু ইউসুফ, সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, মো. কেরামত সরকার, হাজি মোজাম্মেল মোল্লা, আব্দুল আলীম প্রাং, আমেনা খাতুন, হাসিনা খাতুন, নাজমা বেগমসহ ভুক্তভোগী জমির মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামবাসীর পক্ষে আবু ইউসুফ, সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, মো. কেরামত সরকার, হাজি মোজাম্মেল মোল্লা জানান, বংশ পরম্পরায় ৫শ বছরের পুরাতন গ্রামে আমরা বাড়িঘর নির্মাণ করে জমিতে আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। এই বাড়িঘর ও জমি ছাড়া আমাদের অন্য কোনো অবলম্বন নেই। এই সম্পত্তির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পেলে সেই টাকা দিয়ে আমাদের অন্যত্র জমি কিনতে হবে। অন্যথায় আমরা জমির ন্যায্য মূল্য না পেলে আমরণ অনশন করবো।
তারা আরও বলেন, জমি অধিগ্রহণের সময় পুরোনো রেকর্ড দেখে শতাংশ প্রতি ক্ষতিপূরণ ধরা হলেও জমির বর্তমান বাজার মূল্য তার চেয়ে ১০-১২ গুণ বেশি। আমাদের পাশের মৌজার গ্রাম শেলাচাপড়ীতে প্রতি শতাংশ বাড়ির মূল্য দিচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, সেখানে আমাদের দিচ্ছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা। অপরদিকে ফসলি জমির মূল্য আমাদের দিচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা করে আর তাদের দিচ্ছে ১ লাখ ৭০০ টাকা। এমন বৈষম্য নিরসনে গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান কালবেলাকে জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অত্র অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা দরকার। জমি মালিকদের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
মন্তব্য করুন