কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫, ১০:০৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মহাসড়কে ঝুমকার মতো ঝুলছে সোনালু ফুল

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সোনালু ফুল অলংকৃত করেছে স্বর্ণালি আভায়। ছবি : কালবেলা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সোনালু ফুল অলংকৃত করেছে স্বর্ণালি আভায়। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে ফোটে নানা রকম ফুল। এসব ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তোলা এমনই এক ফুল সোনালু। কুমিল্লার কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভাজকে চোখে পড়ল হলুদ সোনালুর মেলা। এ ফুল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে অলংকৃত করেছে স্বর্ণালি আভায়।

পিচঢালা এ মহাসড়কের পথ যেতে যেতে সারি সারি গাছে সোনালু ফুলের দৃষ্টিনন্দন রূপ মোহিত করছে লোকজনকে। অনেকেই গাড়ি থামিয়ে সোনালু ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউ আবার ভিডিও বানাচ্ছে। মহাসড়ককে রঙিন করে তোলা ঝুমকার মতো ঝুলে থাকা এ ফুলের মোহনীয় রূপে বিমোহিত হচ্ছেন ঢাকা-চট্টগ্রামে চলাচলকারী নানা বয়সী মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লার কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভাজকে সোনালি রঙের আভা ছড়িয়ে ফুটে আছে থোকায় থোকায় সোনালু ফুল। এ ফুলের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে ফুলপ্রেমীদের। সবুজ পাতা ছাপিয়ে দৃশ্যমান হওয়া কানের দুলের মতো সোনালি ফুলগুলো দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে বাসের যাত্রীদের। সোনালু ফুলের অলংকার পরে গ্রীষ্মের প্রকৃতি নতুন রূপে যেন সেজে উঠেছে। গ্রীষ্মের রোদে এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বেড়ে যায় বহুগুণ। এ ফুল গ্রামীণ প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

জানা গেছে, সোনালু এ দেশে একটি পরিচিত গাছ। এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা। এর ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট এ গাছের হলুদ ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। মাঝারি আকৃতির এ গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। বসন্তে এ গাছ পত্রশূন্য থাকে। বৈশাখে নতুন পাতা গজায় ও এ গাছে ফুল আসে। হলুদ বরণ সোনালু ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি এর আছে বাহারি অনেক নাম। এসব নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি। সোনালুর ফুল, ফল ও পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এর কাঠের রং ইটের মতো লাল। এই গাছ ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়।

কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রামে একসময় অনেক সোনালু গাছ দেখা যেত। আমাদের ঘরবাড়ির চারপাশেও ছিল অনেক গাছ। এখন খুঁজলে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি পাওয়া যাবে। হয়তো কাঠ খুব একটা দামি নয় বলে কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ কালবেলাকে বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে হলুদ রঙের বাহারি সোনালু। গাছ হলুদ ফুলে বর্ণিল থাকায় চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন। যে কারণে চলাচলকারীরা এখন সোনালু ফুলের সুবাস নিতে নিতে গন্তব্যে যেতে পারছেন। গ্রীষ্মকালে জারুল, কৃষ্ণচূড়ার মতো এ সোনালু ফুল প্রকৃতি আমাদের উপহারস্বরূপ দিয়েছে। তবে প্রকৃতিকে সাজাতে আমাদেরও সবার এগিয়ে আসা উচিত।

কুমিল্লা সিটি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আবদুল হান্নান কালবেলাকে বলেন, মধ্যম আকৃতির সোনালু এ দেশের স্থায়ী বৃক্ষ। সোনালুর ফুলে পাপড়ি থাকে পাঁচটি। এটির পুংকেশর ১০টি এবং দীর্ঘ মঞ্জুরি দণ্ড আছে। বসন্তে এটি পত্রশূন্য থাকে। গ্রীষ্মকালের বৈশাখে নতুন পাতা গজায়। প্রকৃতিতে শোভাবর্ধনে সোনালুর জুড়ি নেই। সোনালু ওষুধি বৃক্ষের তালিকাভুক্ত গাছ। সোনালুগাছের পাতায় ও বাকলে ওষুধি গুণাগুণ আছে। বিশেষ করে, এর ফল বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে কাজ করে। এটি ডায়রিয়াও বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা কালবেলাকে বলেন, মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকের বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, হৈমন্তী, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুলসহ প্রায় ৫৪ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক স্লোপে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, চালতা, নিম, একাশিয়া, হরিতকীসহ ওষুধি ও ফলজ বিভিন্ন প্রজাতির ৪২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ পরিচর্যায় জন্য শ্রমিক রয়েছে। তারা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন। বর্তমানে সোনালু ফুল ফুটে মহাসড়কের পরিবেশ আরও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গণঅভ্যুত্থানের পাটাতন বিএনপিই তৈরি করেছিল : আজাদ

আপনার মোবাইল ফোন সুরক্ষিত তো?

রাতেই ফারুকীর জটিল অস্ত্রোপচার হতে পারে

খাবার খেলেই ঢেঁকুর ওঠে, এই অভ্যাস ভালো না খারাপ?

শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির মেলা

কেউ কেউ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য অনেকভাবে কথা বলছেন : এ্যানি

চবিতে শতভাগ আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রশাসনিক ভবনে তালা

খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রদল নেতার ব্যতিক্রমী আয়োজন

বেতন পাওয়ার পাঁচ মিনিট পরই চাকরি ছাড়লেন কর্মী

কুয়েতে ভেজাল মদে ২৩ জনের মৃত্যু, মূলহোতা বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

১০

ছাত্রশিবিরের ৩০ দফা শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে

১১

এআই-এর সহায়তায় দুই মাসে ১০ কেজি ওজন কমালেন তরুণী!

১২

কনটেইনারবাহী গাড়িতে পালাচ্ছিলেন পুলিশ কোপানো মামলার প্রধান আসামি

১৩

মহাখালীর পেট্রল পাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে

১৪

মাছ ধরতে গিয়ে খালে মিলল ৬ গ্রেনেড

১৫

ভারতের সর্বনাশে বাংলাদেশের ‘পৌষ মাস’

১৬

বিদেশে পাচার হওয়া ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির ‘তথ্য’ প্রধান উপদেষ্টার হাতে

১৭

সপ্তাহের সেরা সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি, পদ প্রায় ১৭০০

১৮

দেশ যেন চরমপন্থা ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য হতে না পারে : তারেক রহমান

১৯

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যা দুর্গতদের মাঝে নাবিল গ্রুপের খাদ্য সহায়তা

২০
X