সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আলোচিত ভয়ংকর গুপ্তঘরে আটকে বৃদ্ধ ও নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার সুমন সেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক আলমগীর হোসেন ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে, সোমবার (১২ মে) রাতে সদর উপজেলার বহুলী বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার সুমন সেখ রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল হক রতন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গুপ্তঘরে শিল্পী খাতুন ও আব্দুল জুব্বার বন্দী থাকার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ন্যস্ত হয় সোমবার। দায়িত্ব পেয়ে রাতেই বহুলী বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোনারাম গ্রামের গুপ্তঘরের মালিক সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন এবং পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম আরাফাতকে এর মাস্টার মাইন্ড বলে দাবি করেন। তবে ভুক্তভোগীরা ৫ বা ৬ মাস বন্দী থাকার কথা বললেও সুমন জানিয়েছেন তারা সেখানে দুই মাস বন্দী ছিলেন।
এসআই বলেন, প্রধান আসামি আরাফাতকে পুনরায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে শিগগির ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২ মে ভোরে রায়গঞ্জ উপজেলার সোনারাম গ্রামে দিনমজুর সুমনের বাড়িতে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে গুপ্তঘর থেকে মাটি খুঁড়ে সুরঙ্গ পথ তৈরি করে বেড়িয়ে আসেন রায়গঞ্জ উপজেলার লক্ষিবিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৩৮) ও পূর্ব পাইকড়া গ্রামের মৃত রুস্তম শেখের ছেলে আব্দুল জুব্বার (৭৫)। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা জহুরুলের বাড়িঘর ও গুপ্তঘর ভাঙচুর এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। একই দিনে পশ্চিম লক্ষীকোলা গ্রামে অভিযুক্ত নাজমুল ইসলাম আরাফাতের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পশ্চিম লক্ষীকোলা গ্রামের আরাফাতের সেচপাম্প ঘরে আরও একটি গুপ্তঘরের সন্ধান পায় স্থানীয়রা। সেটাও ভেঙে ফেলে এলাকাবাসী।
মুক্তি পেয়ে ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে আমাকে তুলে নিয়ে যায় আরাফাত। এরপর হাত-পা বেঁধে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে প্রায় ৪ মাস আগে ওই গোপন ঘরটিতে রাখে। সেখানে আগে থেকেই ওই বৃদ্ধকে রাখা হয়েছিল। আরাফাত তাদেরকে মেরে কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির কথাও বলেছিল। বৃদ্ধ জুব্বারের পায়ে একটি ক্ষত ছিল, সেই ক্ষত ড্রেসিং করার জন্য ভেতরে একটি কেচি রেখে যায় আরাফাত। সেই কেচি দিয়ে ৪/৫ দিন ধরে সুরঙ্গ তৈরি করে বের হই আমরা।
বৃদ্ধ আব্দুল জুব্বার বলেন, আমার কাছ থেকে ৮ বিঘা সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছে। সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় ব্যাপক নির্যাতন করেছে। গোপন ঘরে তাদের দিনে একবার খেতে দেওয়া হতো। গোসলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
এস ঘটনায় শিল্পী খাতুনের স্বামী মনসুর আলী ও আব্দুল জুব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় প্রধান আসামি নাজমুল ইসলাম আরাফাতকে। পুলিশি অনুসন্ধানে আন্ডারগ্রাউন্ড কক্ষ পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
প্রতিটি কক্ষের আয়তন ছিল মাত্র ৪ ফুট উঁচু দৈর্ঘ্য ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে রায়গঞ্জ থানা পুলিশ আসামি আরাফাতকে দুদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ১২ মে দুটি মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। দুটি মামলাই তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই নাজমুল হক রতন।
মন্তব্য করুন