রাজশাহীর বাঘায় মেয়েকে স্কুলে নেওয়ার পথে বাসের চাকায় পা হারান বাবা ও মেয়ে। এ সময় গুরুতর আহত হন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীও। অবশেষে স্ত্রী ও মেয়েকে রেখেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাবা জাহেদুল ইসলাম শান্ত।
সোমবার (১৯ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সার্জিক্যাল আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নিহত জাহেদুল ইসলাম শান্ত নাটোরের লালপুর উপজেলার আটটিকা-জামতলা এলাকার এজাহার আলীর ছেলে। তার শিশু কন্যা তুরাইফা বাঘা পৌরসভা সংলগ্ন স্থানীয় গ্রিন হ্যাভেন স্কুলের শিশু শ্রেণির ছাত্রী।
এর আগে সোমবার সকালে রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা এলাকার বানিয়াপাড়ায় ঈশ্বরদী-বাঘা আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘাতক বাসের চাকা বাবা শান্ত ও মেয়ে উম্মে তুরাইফা খাতুনের ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা তুরাইফার মাও গুরুতর আহত হন। তার একটি হাত ভেঙে যায়। বর্তমানে তুরাইফা ও তার মা মোসা. জেসমিন খাতুন হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, তুরাইফার বাবা শান্ত হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করেন। তার মেয়ে তুরাইফা বাঘা পৌরসভা সংলগ্ন স্থানীয় গ্রিন হ্যাভেন স্কুলের শিশু শ্রেণির ছাত্রী। বাবার মোটরসাইকেলের পেছনে বসেই নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করত। সোমবার সকালে তুরাইফার স্কুলে যাওয়ার সঙ্গী হয় বাবা-মা দুজনই। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোসা. জেসমিনকে সঙ্গে নিয়েই মেয়ে সুরাইয়াকে মোটরসাইকেলে নিয়ে স্কুলে রওয়ানা হন শান্ত।
বাঘা থেকে ঢাকাগামী বেপরোয়া গতির সুপার সনি নামের একটি বাস শান্তর মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেলের পেছনে বসা স্ত্রী দূরে ছিটকে পড়ে গেলে তার হাত ভেঙে যায়। আর শান্ত ও তার মেয়ে তুরাইফা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল থেকে পড়ে বাসের সামনের অংশে সজোরে ধাক্কা লাগে। এতে উভয়ের ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে দেখা দেয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের।
স্থানীয়রা দ্রুত গুরুতর আহত শান্ত, তার স্ত্রী জেসমিন ও একমাত্র শিশু কন্যা সুরাইয়াকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আহত বাবা-মেয়ে ও বিচ্ছিন্ন পা দুটি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কাটা পাসহ তাদের ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেছিলেন। কিন্তু শান্তর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের আর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা বাবা ও মেয়েকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেছিলাম। কিন্তু শান্তর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় আমরা তাদের ঢাকায় পাঠাতে পারিনি। আমরা রামেক হাসপাতালেই চেষ্টা করছিলাম, পা কোনোভাবে জোড়া লাগানো সম্ভব হয় কিনা। সার্জিক্যাল আইসিইউতে রেখে আমরা তার চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। কিন্তু অবস্থার আরও বেশি অবনতি হওয়ায় সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মারা যান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মেয়ের অপারেশন হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে তাকে ও তার মাকে হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাঘা থানা পুলিশের ওসি আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, সোমবার সকালে শান্ত তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছিলেন। পথে বানিয়াপাড়ায় পৌঁছলে ঢাকাগামী সুপার সনি নামের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় বাবা-মেয়ে বাসের সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা খায়। তাদের মোটরসাইকেলটিও ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এতে বাবা ও মেয়ের শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় শান্তর স্ত্রীরও একটি হাত ভেঙে গেছে। পরে শুনলাম, রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শান্ত মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পরে বাসচালক ও সহকারীরা পালিয়ে গেছে। পরে বাসটি পুলিশ থানায় জব্দ করে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
মন্তব্য করুন