সিলেটের ওসমানীনগরে জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রবাসী শেখ মাসুক মিয়া হত্যা মামলায় চার ভাই ও ২ ভাবিসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এ রায় ঘোষণা করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের ৮ আসামির মধ্যে একজন পলাতক রয়েছেন।
বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সোহেল রানা।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ জুন বিকাল ৩টায় নিজ বাড়ি গুপ্তপাড়া থেকে গোয়ালাবাজারে যান প্রবাস ফেরত মাসুক মিয়া। বাজার থেকে ওইদিন তিনি আর ফিরে আসেননি। মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী যোগাযোগ করলে রিং বাজলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। পরে আবারও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পরদিন ১৪ জুন ওসমানীনগরের দাসপাড়া গফুর মিয়ার বাড়ির পশ্চিম পাশে কবরস্থানের সামনে রাস্তা সংলগ্ন সাবু মিয়ার ধান ক্ষেত থেকে মাসুক মিয়ার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এরপর এলাকায় মাইকিংয়ে সংবাদে নিহতের সহোদর দণ্ডিত আসামি আলফু ও শেখ তোতা ঘটনাস্থলে গিয়ে মাসুক তাদের ভাই বলে লাশ শনাক্ত করে। পরবর্তীতে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আলফু মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন ওসমানীনগর থানার সাবেক ওসি তদন্ত এসএম মাঈন উদ্দিন। তদন্তকালে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহতের ভাই আলফু, পংকী ও তোতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। প্রবাস থেকে ভাইদের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন শেখ মাসুক মিয়া। কিন্তু ভাইয়েরা সেই টাকা দিয়ে তাদের নামে জমি কিনেছেন। দেশে ফিরে পাঠানো টাকায় কেনা জমি তার লিখে দিতে দাবি করলে পরিকল্পিতভাবে দুই ভাবি ও ভাইয়েরা মিলে তাকে হত্যা করে।
পরে থানার এসআই মমিনুল বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএম মাঈন উদ্দিন। পরে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আমলি আদালতে সহোদরকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন আলফু, পংকি ও তোতো। তাদের দেওয়া তথ্য মতে- আসামি ফখর উদদ্দিন, লাভলী বেগম, আনোয়ারা বেগম, শেখ হাজি আব্দুর রউফ লেবু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ১৬ জুলাই গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আসামি আনোয়ারা বেগমও একই আদালতে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেন। তাদের স্বীকারোক্তি মতে, বর্ণিত মামলার বাদী আলফু মিয়াসহ অন্যান্য আসামিরা মিলে মাসুক মিয়াকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধে খুন করে।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৮ মে আদালতে চার সহোদরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএম মাঈন উদ্দিন। মামলাটি এ আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করা হলে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় শুনানিকালে ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ওসমানীনগর উপজেলার ফতেহপুর গুপ্তপাড়া গ্রামের মৃত শেখ মদরিছ আলীর ছেলে ও নিহতের ভাই শেখ আলফু মিয়া (৪১), তার সহোদর শেখ পংকী মিয়া (৪৩), শেখ তোতা মিয়া (৫৭), শেখ আব্দুর রব ওরফে লেবু মিয়া (৬৩), শেখ পংকী মিয়ার স্ত্রী লাভলী বেগম, আব্দুর রউফ ওরফে লেবু মিয়ার শেখ আনোয়ারা বেগম ওরফে এশাই (৪৮), একই এলাকার মৃত আখলাছ আলীর ছেলে ফখর উদ্দিন ওরফে অহর (৪৬) এবং উপজেলার গ্রামতলা দাসপাড়ার হাজি আলা উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ওরফে দিপু মিয়া (৪৩)। এ মামলায় দিপু মিয়া ১ জন পলাতক রয়েছেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট এখলাছুর রহমান ও আল আসলাম মুমিন। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও পলাতকের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফারজানা হাবিব চৌধুরী।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সোহেল রানা বলেন, জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রবাসী শেখ মাসুক মিয়া হত্যা মামলায় চার সহোদর ও ২ ভাবিসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় দিপু মিয়া ১ জন পলাতক রয়েছেন।
মন্তব্য করুন