কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, তত জমতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাট। মহানগর থেকে শুরু করে উপজেলার হাটগুলোতে প্রতিদিন ট্রাকের পর ট্রাকে আসছে গরু। বড় গরুর সংখ্যাই বেশি থাকলেও, হাটজুড়ে ক্রেতাদের আগ্রহ মূলত মাঝারি গরু ঘিরে। তবে চলমান বৃষ্টিপাত এবং চড়া দামের কারণে হাটে বেচাকেনা এখনও আশানুরূপ হয়নি।
পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে নগরীতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতায় বসেছে ১৩টি হাট। এর মধ্যে তিনটি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী। নগরের সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় এলাকায় স্থায়ী হাট চালু থাকছে। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্ধারিত জায়গায় অস্থায়ী হাটও বসানো হয়েছে। স্থায়ী-অস্থায়ী এসব হাটে পশু পাওয়া যাচ্ছে।
মাঝারি গরুই এখন ক্রেতাদের পছন্দ চট্টগ্রামের যেকোনো হাটে গেলেই চোখে পড়বে বড় আকৃতির গরুর সারি। কিন্তু খামারিদের মুখে হাসি নেই। কারণ, বড় গরুর দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই সেদিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অধিকাংশই খুঁজছেন মাঝারি সাইজের তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী গরু।
নগরীর সাগরিকা গরুর বাজারে মাঝারি গরু কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আব্দুর রহিম বলেন, সাগরিকায় এবারও প্রচুর গরু এসেছে। তবে দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি মনে হচ্ছে। আমি মাঝারি গরু খুঁজছি।
বায়েজিদ এলাকার একটি হাটে আসা ক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বড় গরুর দাম অনেক বেশি। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন। মাঝারি গরুতে মানিয়ে নেওয়াই ভালো।’
এদিকে বিভিন্ন হাটে পশুর সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেক ক্রেতা অভিযোগ করছেন, গরুর আকৃতি অনুযায়ী বিক্রেতারা দাম চড়াচ্ছেন। অন্যদিকে খামারিরা বলছেন, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ ও অন্য ব্যয় বিবেচনায় দাম যৌক্তিক।
অন্যদিকে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হাটে জমে উঠেছে কাদা। অনেক জায়গায় হাটের ভেতরে পানি জমে গেছে, হাঁটা-চলাও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেকেই হাটে এসে পশু দেখেই ফিরে যাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে দিনভিত্তিক বেচাকেনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
এক বিক্রেতা বলেন, বৃষ্টি না হলে আরও বেশি গরু বিক্রি হতো। লোকজন কাদায় নামতেই চায় না।
দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতা কম নগরীর বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে ভিড় আছে ঠিকই, কিন্তু তার বড় অংশই দর্শনার্থী। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে গরু দেখতে আসছেন, তবে কিনছেন না। বিক্রেতারা জানান, এমনিতেই ক্রেতার সংখ্যা কম। বৃষ্টির মধ্যে যারা আসছেন, অধিকাংশই দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন। যদিও বেচাকেনা দ্রুতই জমে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন হাটের ইজারাদাররা।
কুষ্টিয়া থেকে বিশালাকৃতির পাঁচটি গরু সাগরিকা গরুর হাটে নিয়ে এসেছেন সুজন মিয়া। তিনি বলেন, আমি সাত লাখ করে দাম হাঁকিয়েছি। কিন্তু যে দাম বলতেছে, খুব আশাহত হচ্ছি।
চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠে গড়ে ওঠা হাটের ইজারাদার মো. আলমগীর কালবেলাকে বলেন, বেচাকেনা মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আশা করছি, শিগগিরই হাট জমে উঠবে।
একই কথা বললেন পূর্ব হোসেন আহম্মদপাড়ার টিএসপি মাঠের হাটের ইজারাদার মো. সালাউদ্দিনও। তিনি বলেন, বেচাকেনা ধীরে ধীরে জমে উঠছে।
মন্তব্য করুন