সিলেট ব্যুরো ও জকিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আশ্রয়কেন্দ্রে নেই ঈদ আনন্দ

জকিগঞ্জের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখে কষ্টের ছাপ। ঈদে ভালো কিছু খাবেন এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ছবি : কালবেলা
জকিগঞ্জের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখে কষ্টের ছাপ। ঈদে ভালো কিছু খাবেন এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ছবি : কালবেলা

সিলেটে এবার বন্যায় ম্লান ঈদের আনন্দ। জকিগঞ্জের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা শতাধিক নারী-পুরুষ ঈদের দিনে ঠিক কী করবেন তা ভেবেই পাচ্ছেন না। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় অনেকের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র এমনকি জামাকাপড়ও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের সবার কষ্ট নিয়ে এবার ঈদ কাটছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে বাড়িঘরে ফিরলেও গত বছরের মতো ঈদ আনন্দ করতে পারছেন না।

এবারের বন্যায় সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫টি ইউনিয়নের ২৫/৩০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর থেকে পানি নামলেও নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ।

শনিবার (৭ জুন) ঈদের নামাজ শেষে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের ঈদগাহ বাজার আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখে কষ্টের ছাপ। ঈদের দিনে ভালো কিছু খাবেন এমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবুও যার যার সাধ্যমতো অস্থায়ী চুলার ওপর বসিয়েছেন হাঁড়ি পাতিল। ঈদের একটি আনন্দঘন দিনে ঈদ উদযাপনের কোনো চিন্তা কারও মাথায় নেই। কোনো রকমে দুই বেলা খেয়ে দিন পার করার চিন্তা বানভাসী এসব মানুষের।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ধলিগাঁও গ্রামের জামিল আহমদ বলেন, বন্যার পানি বসতঘরে উঠে ঘরের বেড়া ভেঙে ফেলেছে। তাই তাদের পরিবারের সবাইকে ঈদ করতে হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

একই গ্রামের ফয়জুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত ওনার বসতঘরে পানি। ঘরের ভিতর পলিমাটি ঢুকে সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। বয়োবৃদ্ধ ফয়জুর রহমান ঈদ আনন্দ নয়, কীভাবে তিনি বাড়ি ফিরবেন তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের কামাল উদ্দিন জানান, ৪৪ বছর বয়সে এই প্রথম তিনি বাড়ির বাহিরে আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ কাটাচ্ছেন। নিজের বসতঘরে ঢুকার কোনো উপায় নেই। সর্বনাশী এ বন্যার কারণে ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দে ঈদ পালন করতে হচ্ছে বলেই তার যত আক্ষেপ।

ধলিগ্রামের বিধবা সুনিয়া বেগম বলেন, ঈদ বলতে আমাদের মাঝে কিছুই নাই। একটি সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে আছি। ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে যেতে পারছিনা। আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে এবার ঈদে আর গোশত খাওয়া হবে না। বাড়িতে থাকলে গ্রামের লোকজন কোরবানির গোশত দিত। আশ্রয়কেন্দ্রে কে দেবে? আর গ্রামে এখনো পানি। এ পানির মধ্যে কোরবানিইবা কে দেবে?

আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের আফিয়া বেগম জানান, তাদের ৬ সদস্যের পরিবারে রোজগার মাত্র এক ব্যক্তি। এবারের বন্যায় তাদের বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় প্রবল স্রোতে ঘর হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তাই ঈদে বাড়িতে যেতে পারেননি পরিবারের কেউই। তাদের ঈদ মানে আশ্রয়কেন্দ্রে বসে দিন অতিবাহিত করা।

ধলিগাও গ্রামের মুজিবুর রহমান বলেন, ঈদে তো বাড়ি ফিরতে পারেননি। কবে ফিরতে পারবেন তাও বলতে পারছেন না। বসতঘর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকদের জন্য সকালে খাবার পাঠিয়েছি। যেটুকু সরকারি বরাদ্দ পাচ্ছি তাৎক্ষণিক তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাথরুমে একদম খোলামেলা গোসল করেন? হতে পারে যে ৩ বিপদ

শোবিতাকে ছাড়া বাঁচতে পারি না : নাগা চৈতন্য

চাঁদাবাজবিরোধী অভিযানে গিয়ে আহত ৩ পুলিশ সদস্য

হেলিকপ্টারে এসে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন প্রবাসী

ইসফাকের জায়গায় বিসিবি পরিচালক হলেন রুবাবা দৌলা

আগামী ৫ দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর

শ্বশুরবাড়িতে গাছে ঝুলছিল জামাইয়ের মরদেহ 

হিসাবরক্ষণ পদে নিয়োগ দিচ্ছে আড়ং

ইরানের হাতে আসছে ‍রুশ অস্ত্র, মধ্যপ্রাচ্যে কী হতে যাচ্ছে?

নারী বিশ্বকাপের জন্য ২১ সদস্যের দল ঘোষণা ব্রাজিলের

১০

‘সহজক্যাশে’ লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা

১১

রেড ক্রিসেন্টে চাকরির আবেদন করুন অনলাইনে

১২

মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে সেই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

১৩

অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দিচ্ছে আরএফএল

১৪

ফের মা হতে চলেছেন ভারতী সিং

১৫

টিকা থেকে একটি শিশুও যেন বাদ না যায় : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা 

১৬

কোন রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, জানুন কী বলছে গবেষণা

১৭

ধোপাদিঘিতে মাছ মরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা

১৮

জামায়াত আমিরের সঙ্গে ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারীর সাক্ষাৎ

১৯

চ্যাটজিপিটিতে নতুন ফিচার চালু

২০
X