রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষার পরিবেশ, নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সংকট নিরসনে দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২২ জুন) সকাল থেকে কলেজে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে তারা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা লালবাগ রেলগেট ৩ ঘণ্টা অবরোধ রাখেন। পরে অবরোধ প্রত্যাহার করে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে আসতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রশাসনকে ২৫ দফা এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ১২ দফা দাবি পেশ করেছেন। দাবি না মানা হলে আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ শাটডাউন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো—কলেজের সকল খাতে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মানসম্মত অডিটোরিয়াম নির্মাণে পূর্ণ বরাদ্দ নিশ্চিত করা, কলেজের দখলকৃত জমি উদ্ধার এবং কলেজ চত্বরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করা ও সৌন্দর্যবর্ধনমূলক গেট নির্মাণ, কলেজের জমি অন্য কোথাও না দেওয়ার লিখিত নিশ্চয়তা, হল সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুরোনো হলগুলোর সংস্কার।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অন্তত ছয়টি বাস সরবরাহ, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ স্মার্ট ক্লাসরুমে রূপান্তর, কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি ও উন্নত সরঞ্জাম প্রদান। এরকম মোট ৩৭ দফা দাবি শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, নতুন বিভাগ সংযোজনের প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বাস সংকট, ছাত্রী বিশ্রামাগারের অনুপযুক্ত পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা ও আইসিটি সুবিধার ঘাটতি নিয়ে তারা অবহেলিত থেকেছেন। বারবার প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে জানান তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে কলেজের নানাবিধ সংকটের কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই আমরা আন্দোলনে নেমেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পদে পদে সংকটে জর্জরিত। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
২৪ ঘন্টার আলটিমেটামের ঘোষণা দেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স এর শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। শিক্ষা উপদেষ্টা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সরাসরি আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। প্রশাসন দ্রুত দাবি মেনে না নিলে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রমিজ আলম। এ সময় তারা সময় সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন।
পরে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যে দাবিগুলো কলেজ প্রশাসনের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো শিক্ষার্থীদেরকে লিখিত আকারে দেওয়া হবে। আর যেসব দাবি আমাদের কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছে, সেগুলো স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রমিজ আলম বলেন, কলেজ প্রশাসনের কাছে দাবিগুলো তারা দিয়েছে সেগুলো দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ। এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এখানে উপস্থিত হয়ে সমস্যাগুলো দেখার যে দাবি তারা তুলেছেন আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।
মন্তব্য করুন